বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে ঝড়–বৃষ্টি ও বজ্রপাতে মানুষ মারা যায়। ১৫ ও ১৬ মে, ২০১৫, শুক্র ও শনিবার বাজ পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিবছর গ্রীষ্মের শুরুতে কালবৈশাখী এবং আশ্বিন-কার্তিকে বাংলাদেশে ঝড়-বৃষ্টি হয়। তখন বজ্রপাতে প্রাণহানি আমাদের দেশে নিয়মিত ঘটনা। এক হিসাবে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় একজন (০.৯) মারা যায়। অর্থাৎ বছরে গড়ে দেড় শরও বেশি প্রাণহানি ঘটে বজ্রপাতে। মেঘে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চার্জ জমা হলে মাঝখানের বাতাসের বাধা অতিক্রম করে মাটিতে চলে আসে, এটাই বজ্রপাত। এ সময় বিদ্যুৎ চমকায়। মেঘে মেঘে ঘর্ষণেও বিদ্যুৎ চমকাতে পারে। সমগ্র পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ড ৪০-৫০ বার বিদ্যুৎ চমকায়। অর্থাৎ বছরে বিশ্ব পরিসরে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটিবার বিদ্যুৎ চমকায়। আকাশ কালো করে ঝড়–বৃষ্টি শুরু হলে কী করব? প্রচলিত কিছু কৌশল আমরা অনুসরণ করতে পারি।

১. প্রথম কাজ হবে খোলা মাঠে না থেকে ঘরের ভেতরে থাকা। কারণ, মেঘের বিদ্যুৎ মাটির কাছাকাছি উঁচু জায়গাতেই আঘাত হানে। খোলা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকলে মাথায় বাজ পড়ার আশঙ্কা বেশি। কোনো গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া বোকামি, কারণ বাজ তো সেই গাছেই পড়তে পারে, তাহলে গাছের সঙ্গে আমিও পুড়ে ছাই হয়ে যাব। এ জন্যই ইংরেজি প্রবাদে বলা হয়, ‘হোয়েন থান্ডার রোরস, গো ইনডোরস!’ (যখন বাজ পড়ে, ঘরে ঢুকে পড়ো।)
২. ঝড়–বৃষ্টির সময় খোলা প্রান্তরের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া কোনো রাস্তায় বাস বা গাড়িতে থাকলে, নেমে কাছের কোনো বাসায় আশ্রয় নিলে ভয় থাকে না।
৩. নদীতে নৌকায় থাকলে বাজ পড়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নৌকা পাড়ে ভিড়িয়ে কাছের ঘরবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া উচিত।
৪. গ্রামে বাড়ির চারপাশে নারকেলগাছ লাগানো দরকার। বাজ পড়লে ওই গাছেই পড়বে। ঘর বাঁচবে।
৫. শহরে উঁচু দালানে বাজনিরোধক আর্থিং–ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে। বাড়ির ছাদে উঁচু করে রাখা চোখা ধাতবদণ্ড থাকে। ওই শলাকার সঙ্গে যুক্ত তামার তার দেয়ালের ভেতরে লুকোনো পাইপের মধ্য দিয়ে মাটির অন্তত ১০-১২ ফুট গভীরে বিশেষ ব্যবস্থায় স্থাপন করা হয়। মাটিতে বিদ্যুৎ ভোল্টশূন্য। তাই আকাশে মেঘের উঁচু বিদ্যুৎ চার্জ দ্রুত ছাদের চোখা ধাতবদণ্ডের সঙ্গে মিলিত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ভবনের কোনো ক্ষতি হয় না।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস/সায়েন্স টাইমস, ১২ মে, ২০১৫