যার সনে নেই লেনাদেনা

বন্ধুর সঙ্গে টক-ঝাল-মিষ্টি সম্পর্ক থাকতে পারে। হতে পারেন ‘মানিকজোড়’। একজন ভালো বন্ধু আপনার জীবনকে যেমন সুন্দর করে তুলতে পারে, তেমনি একজন খারাপ বন্ধু বিষিয়ে তুলতে পারে জীবন। তাই বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্ধুদের মধ্যে সাতটি লক্ষণ দেখলে তার সঙ্গে কিছুদিন দূরুত্ব রাখাই ভালো।
আপনাকে শুনতে হচ্ছে বেশি
ভালো সম্পর্কের মধ্যে দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে। জর্জিয়ার এক বিশেষজ্ঞের মতে, দুজনের মধ্যে আলাপচারিতার সময় কেউ যদি একটানা বকবক করে চলে, আরেকজনকে শুধু শুনে যেতই হয়, লাল পতাকা দেখানো ভালো। পুরো সময় যদি একজন খেয়ে ফেলে, তবে তার সঙ্গে কী সম্পর্ক থাকে? বন্ধুত্ব পারস্পরিক প্রক্রিয়া—প্রত্যেকের সুযোগ থাকা উচিত।
মুখোমুখি সাক্ষাতে বিমুখ
বন্ধুকে শুধু ফেসবুকে ছবি ট্যাগ করে দিয়ে আর কোনো খোঁজ খবর না করলে কি আর বন্ধুত্ব থাকে? যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, বন্ধুর সঙ্গ উপভোগ করলে দেখা করা কঠিন কিছু নয়। দুজনের যদি দেখা-সাক্ষাৎ না হয়, তবে সম্পর্ক ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যখন একসঙ্গে থাকেন, তখন সম্পর্ক কেমন থাকে—একটু পর্যবেক্ষণে দেখুন। যদি অস্বস্তি লাগতে শুরু করে, তবে বুঝবেন দুজনের মধ্যে যেসব বিষয়ে মিল ছিল, তা আর এক রকম নেই।
দেখা হলেই ঠোকাঠুকি
বন্ধুদের মধ্যে দেখা–সাক্ষাৎ হলে সাধারণত সম্পর্ক জোরালো হয়। মনের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করে আর কর্মস্পৃহা বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার চিকিৎসক আমান্ডা ডেভরিচ বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ মানে ঠোকাঠুকি লাগা বা সম্পর্ক ভেঙে পড়া বা সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নয়; বরং নিজেকে আরও পরিপূর্ণ করে নেওয়া। বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর ঠোকাঠুকি লেগে গিয়ে যদি সে যদি মানসিক বা শারিরীকভাবে ভেঙে পড়ে, তবে সেখান থেকে কেটে পড়াই ভালো। বন্ধু যদি বিপদে থাকে, তাকে সাহায্য, সমর্থন, উদার মনে ভালোবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোই আসল বন্ধুর পরিচয়।
খুলে বলতে অস্বস্তি
বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও বিশ্বস্ততার ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু তার সঙ্গ আলাপ করা যায়। যখন মানসিকভাবে দুর্বল বোধ হয়, তখন বন্ধুর কাছে বলতে পারলে স্বস্তি লাগে। কিন্তু যে বন্ধুর কাছে অসহায় পরিস্থিতি খুলে বললে সে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন তার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া ভালো।
প্রতিযোগী
এই ২০১৭ সালে এসে বন্ধুকে শত্রু বানানোর সময় খুব বেশি মানুষের নেই। যদি দেখেন আপনার বন্ধুদের কেউ জীবনের সব ক্ষেত্রে আপনাকে টক্কর দিয়ে চলার চেষ্টা করছে, তাকে তালিকা থেকে বাদ দিন। ফ্লোরিডার বিয়ে এবং পরিবারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মারনি ফুয়েরম্যানের পরামর্শ এটাই। তাঁর মতে, যে বন্ধু সবকিছুতেই প্রতিযোগিতা আর ঈর্ষা করে, তার সঙ্গে সম্পর্ক বিষিয়ে ওঠে। সত্যিকারের বন্ধু আপনার অর্জনে খুশি ও গর্ব বোধ করবে। যে বন্ধু আপনার জীবনের লক্ষ্য অর্জনে ও স্বপ্ন পূরণে সমর্থন করবে সেই প্রকৃত বন্ধু।
নেতিবাচক খবর যে শোনায়
দাম্পত্য সম্পর্কের মতো বন্ধুত্বের মধ্যে ভালো-মন্দ আছে। জীবনের ভালো খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে দুধের মাছি বা সুসময়ের বন্ধুদের থেকে দূরে থাকা ভালো। যে বন্ধু বেশি বেশি নেতিবাচক কথা বলে, সব সময় নানা অভিযোগ করতে থাকে, তবে তার থেকে দূরে থাকাই ভালো। ওয়াশিংটন ডিসির বিয়েবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মারিসা নেলসন বলেন, ‘যখন আপনার ভালো সময় থাকবে, তখন যদি বন্ধুদের সত্যিকারের সুখী না দেখেন তবে তাদের থেকে দূরে থাকবেন। নেতিবাচক সমালোচনা ও বিচারিক মতামত আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারে।’
সীমাবদ্ধতাকে সম্মান না করা
বন্ধুকে বলেন, রাত ১১টার পর বাইরে কোথাও যাবেন না, আপনার সমস্যা আছে। এই সীমাবদ্ধতাকে সম্মান না করে যদি জোরাজুরি করতে থাকে, তাদের কাছ থেকে দূরে থাকাই উত্তম। কারও সীমাবদ্ধতাকে বন্ধু হিসেবে সম্মান করতে হবে। আপনি কাজে ভয়ানক ব্যস্ত এবং পরে যোগাযোগ করবেন—এমন কথা জানার পরেও কেউ যেন ফোন করে জোর না করে, সে রকম সীমাবদ্ধতা রাখা উচিত। বন্ধুত্বের সম্পর্ক সহজে ভাঙা কঠিন। বন্ধুদের কাছে সমস্যার কথা জানান। প্রকৃত বন্ধু সব কিছু মেনে ও মানিয়ে নেবে। যদি বন্ধুদের মধ্যে কিছুদিন মনোমালিন্য থেকে দূরত্ব বাড়ে, তাহলে যত্ন নিয়ে ঠিকঠাক করে ফেলুন। বন্ধু তো, কতক্ষণ অভিমান করে থাকবে!
হাফিংটন পোস্ট অবলম্বনে মো. মিন্টু হোসেন