যেন অরণ্য

বারান্দায় সবুজের ছোঁয়া। কৃতজ্ঞতা: ফওজিয়া জাহানছবি: খালেদ সরকার

বারান্দায় গড়ে তোলা যায় ছোট বাগান।

এখানে প্রশান্ত মনে খেলা করে উঁচু উঁচু গাছ।

সবুজ পাতার ’পরে যখন নেমেছে এসে দুপুরের সূর্যের আঁচ

জীবনানন্দ দাশের ‘অবশেষে’ কবিতার এই দুটি লাইনের মতোই সবুজ পাতায় দুপুরের সূর্যের এই আঁচ প্রশান্তি এনে দেয় মনে। করোনাকালে গাছের সঙ্গে মনের সখ্য বেড়েছে বহুগুণ। তাই ছোট বা আলো কম এমন বারান্দাও খালি পড়ে নেই। আর ফুল বা ফলের গাছ যদি না–ই হয়, শুধু সবুজ পাতা দিয়েই তৈরি করে নেওয়া যায় একগুচ্ছ নির্মল প্রকৃতি।

দেয়ালেও ঝোলাতে পারেন, পাবেন কিছু বাড়তি জায়গা

ফওজিয়া জাহান পেশায় একজন স্থপতি ও আলোকচিত্রী। স্থপতি হিসেবে কাজ করছেন অন্দরসজ্জা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভলিউম জিরোতে। ছবি তুলছেন আট বছর ধরে। সবুজের প্রতি ভালো লাগা থেকেই তাঁর ঢাকার বাসার ছোট বারান্দায় আড়াই বছর ধরে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন বাগান।

ফওজিয়ার ছোট এই বাগানে ৮৪টি টব আছে, যাতে প্রায় ১২০ ধরনের গাছ লাগিয়েছেন। কর্মজীবী ও খুব ভ্রমণপ্রিয় হওয়ায় বাগানের যত্ন তেমন নিতে পারেন না ফওজিয়া জাহান। রোদ কম আসে বলে যে গাছে পানি, রোদ ও যত্ন তিনটিই কম লাগে এমন গাছের বাগান করেছেন তিনি।

বিভিন্ন জাতের মানিপ্ল্যান্ট, অ্যাগলাওনিমা, এরিকা পাম, লাকি ব্যাম্বু, কাঁটামুকুট, স্নেক প্ল্যান্ট, ফিলোডেনড্রন, স্পাইডার প্ল্যান্ট, ইঞ্চ প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, পাথরকুচি, অ্যারোহেডগাছ সাজানো হয়েছে বারান্দায়। এ ছাড়া এই গাছগুলো পানি ছাড়াই বাঁচতে পারে ৭ থেকে ১০ দিন।

ব্যবহার করতে পারেন নানা রকম টব

১০ ফুট লম্বা আর ৪ ফুট চওড়া বারান্দায় গাছগুলো সাজানো হয়েছে ইউলুপের মতো করে। এতে করে বাগানের মাঝখানে সরু জায়গায় বসলে মনে হয় যেন চারদিক থেকে সবুজ ঘিরে রেখেছে। ঝোলানো আর লতানো গাছগুলোকে বারান্দা ও জানালার গ্রিলে ঝুলিয়ে দিলে তা অনেকটাই প্রাকৃতিক পর্দার কাজ করে। এ ছাড়া বারান্দার আকার অনুসারে টবের উচ্চতা বাছাই করা দরকার। এমন ছোট বারান্দায় ২ ইঞ্চি থেকে সর্বোচ্চ ৮ ইঞ্চি উচ্চতার টব মানানসই। তবে ২ ইঞ্চির ছোট টবগুলো একটু উঁচু কাঠের টেবিলের ওপর রাখতে হবে যেন চোখে পড়ে। বারান্দার কোনো দেয়ালে কারুকাজ থাকলে তার সামনে বেশি গাছ না রেখে একটা স্ট্যান্ড ঝুলিয়ে ছোট কিছু গাছ রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া মেঝেতে জায়গা কম হওয়ায় দড়িতে লতানো গাছ ঝুলিয়ে দেওয়া হতে পারে—সমাধান বললেন ফওজিয়া জাহান।

অ্যাগলাওনিমা, এরিকা পাম, লাকি ব্যাম্বু, কাঁটামুকুট, স্নেক প্ল্যান্ট, ফিলোডেনড্রন জাতীয় গাছ কিছুটা বড় হওয়ায় তা ৮ ইঞ্চির টবে ভালো হবে। ২ বা ৪ ইঞ্চির টবে স্পাইডার প্ল্যান্ট, ইঞ্চ প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, পাথরকুচিপাতা, অ্যারোহেডের মতো ছোট গাছ লাগাতে হবে। ছোট বারান্দায় গাছ রাখতে হবে ছোট করে, তাই বর্ষার সময়ে মাসে ১ বার গাছ ছাঁটাই করলে দেখতে পরিপাটি দেখাবে। সতেজ রাখার জন্য গাছে দু-তিন মাসে একবার কেঁচো সার দেওয়া আর কিছুদিন পরপর গোড়ায় মাটি আলগা করে দেওয়া যেতে পারে।

শুধু সবুজ পাতার এমন বাগানে টব নির্বাচনে একটু ভিন্নতা রাখতে হবে। তা না হলে একঘেয়েমি চলে আসবে। প্লাস্টিকের একরঙা টব ছাড়াও পুরোনো বোতল বা বাটায় বাটিক করা কাপড়, ওয়াল পেপার ও পাটের দড়ি পেঁচিয়ে অনায়াসেই আনা যায় নতুনত্ব। এ ছাড়া সিরামিকের পুরোনো বাটি বা ফুলদানি রাখলে ভিন্নতা আসবে। পুরোনো কাচের বোতল টব হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে তাতে রং দিয়ে করা যেতে পারে নকশা। আবার ঝোলানো টব হিসেবে নারকেলের আইচা, বাঁশের ঝুড়ি বা মাটির হাঁড়িতে আলপনা করে ভিন্ন মাত্রা আনা যায়।