যে অভ্যাস জীবন বদলে দিতে পারে

‘কাল থেকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠব’—কদিন পর পর যাঁরা মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করেন, এবং যাঁদের জীবনে সেই ‘কাল’ আর আসে না, এই বইটি তাঁদের জন্যই। নাম দ্য মিরাকল মর্নিং: দ্য নট-সো-অবভিয়াস সিক্রেট গ্যারান্টিড টু ট্রান্সফর্ম ইয়োর লাইফ বিফোর এইট এএম। লেখক হাল এলরোড।

বইটিতে নিজের গল্প তুলে ধরে লেখক আমাদের জানান, নিয়মিত সকালে উঠে কিছু চমৎকার কাজ করার মাধ্যমে কীভাবে তিনি তাঁর জীবন আমূল বদলে ফেলেছেন। আমরা অনেকেই হয়তো জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই। যদি আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিদিন কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখি, তবে আসতে পারে জাদুকরি পরিবর্তন। লেখকের মতে, এই সময়টি হলো ভোরবেলা। মনোযোগী ও কর্মোদ্যমী সকালের মধ্য দিয়ে শুরু হয় একটি সুন্দর দিন। সকালে ঘুম থেকে ওঠা—এই একটা অভ্যাসই বদলে ফেলতে পারে পুরো জীবন। সকালের প্রাণশক্তি ব্যবহার করে আমরা অর্জন করতে পারি সাফল্য, সুখ ও সুস্বাস্থ্য; কমাতে পারি মানসিক চাপ ও অবসাদ।

ভোরে ঘুম থেকে ওঠার উপায়

সকালে ওঠার জন্য লেখকের পরামর্শ:

১. ঘুমাতে যাওয়ার আগে সকাল-সকাল ওঠার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া।

২. অ্যালার্ম ঘড়িটি বিছানা থেকে দূরে রাখা; যেন অ্যালার্মের আওয়াজ বন্ধের জন্য বিছানা ছাড়তে হয়।

৩. ঘুম থেকে উঠে দাঁত মেজে ফেলা। পুরো এক গ্লাস পানি পান করা, ব্যায়ামের পোশাক পরে ফেলা বা গোসল সেরে নেওয়া; যেন ঘুম ঘুম ভাব পেয়ে না বসে।

SAVERS মডেল

এবার প্রশ্ন হলো, ঘুম থেকে ওঠার পর সকালের সময়টিকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাব?

হাল এলরোড পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন SAVERS মডেল-এর সঙ্গে।

এই মডেল আমাদের বলে সকালে ঘুম থেকে উঠে ৬টি কাজ করার কথা।

S = সাইলেন্স বা নীরবতা পালন

A = অ্যাফারমেশন বা ইতিবাচক কথন

V = ভিজ্যুয়ালাইজেশন বা কল্পনা

E = এক্সারসাইজ বা শরীরচর্চা

R = রিডিং বা পাঠ

S = স্ক্রাইবিং বা লেখালেখি

নীরবতা: ব্যস্ত পৃথিবীর উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও অবসাদ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে দিনের কিছুটা সময় নিজের সঙ্গে নীরবতা পালন। এই সময়টাতে আপনি প্রার্থনা, মনোযোগ অনুশীলন বা ধ্যান করতে পারেন। ভাবতে পারেন আপনার জীবনে পাওয়া ইতিবাচক বিষয়গুলোর কথা। প্রথম দিকে মনকে শান্ত করা কঠিন হলেও নিয়মিত অনুশীলনে ভালো ফল পাবেন।

ইতিবাচক-কথন: কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করার মাধ্যমে আমরা ঠিক করি কম্পিউটারটি কীভাবে কাজ করবে। ঠিক তেমনিভাবে অ্যাফারমেশন বা ইতিবাচক-কথন ঠিক করতে পারে আমাদের মন কীভাবে কাজ করবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব কেমন হবে। অ্যাফারমেশনের এই প্রক্রিয়া খুব সহজ। একটি কাগজে লিখে নিন—আপনি কী কী অর্জন করতে চান এবং কেন, কীভাবে তা পেতে চান, কেমন মানুষ হতে চান, ইত্যাদি। তারপর রোজ সেই কথাগুলো আবেগের সঙ্গে জোরে জোরে পড়ুন ও অনুভব করুন। সারা জীবনই যে একই ইতিবাচক-কথন চালিয়ে যেতে হবে তা নয়। আপনার জীবনে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই অ্যাফারমেশনেও আসবে পরিবর্তন।

কল্পনা: আপনি যা চান, সেটি কল্পনা ও অনুভব করাই হলো ভিজ্যুয়ালাইজেশন বা কল্পনা। আপনার লক্ষ্য, গভীর ইচ্ছা, স্বপ্নগুলোকে কল্পনায় আনুন; দেখুন, অনুভব ও স্পর্শ করুন, শুনুন, ঘ্রাণ নিন! আপনি কেমন ব্যক্তি হতে চান, আর সেই অবস্থানে যেতে হলে আপনাকে কী করতে হবে। আপনি সারা দিনে কী করবেন, সেটিও ঠিক করে নিতে পারেন এই ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে।

শরীরচর্চা: শরীরচর্চার উপকারিতার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। রোজ সকালে এই সময়টাতে আপনি আপনার ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে ব্যায়াম করতে পারেন। এর ফলে আপনার দিনটি শুরু হবে কর্মচাঞ্চল্য ও উদ্যমের সঙ্গে।

পাঠ: রোজ সকালে আপনি যে বিষয়ে জানতে চান বা আগ্রহী সে বিষয়ের ওপর লেখা বই পড়তে পারেন। আপনি জীবনে যে অবস্থানে যেতে চান, সে অবস্থানে ইতিমধ্যেই যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের লেখা পড়তে পারেন। লেখক এ ক্ষেত্রে পরামর্শ দেন—রোজ কমপক্ষে ১০ পৃষ্ঠা পড়া। তবে শুরু করার ক্ষেত্রে রোজ ৫ পৃষ্ঠা পাঠ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও তিনি ভালো বই বারবার পড়ার প্রতিও জোর দিয়েছেন।

লেখালেখি: লেখালেখি যে শুধু লেখকদের জন্য, তা-ই নয়। লেখক না হলেও প্রতি সকালে চিন্তাগুলো কাগজে বন্দী করতে পারেন আপনি। জীবনে আপনার প্রাপ্তিগুলো নিয়েও লিখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কাগজ–কলম কিংবা কম্পিউটার-কিবোর্ড—যে পদ্ধতিটি পছন্দের সেটিই ব্যবহার করুন। নিজের পুরোনো ডায়েরির লেখাগুলো পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার জীবন কোনদিকে কতটা বদলে গেছে। আর হ্যাঁ, বলে রাখা ভালো, হাল এলরোড কিন্তু ভোরের এই সময়টিতেই ‘দ্য মিরাকল মর্নিং’ বইটি লিখেছেন।

SAVERS রুটিনটি আপনি আপনার মতো করে ব্যবহার করতে পারেন। ছয়টি কাজের কোনটি কখন ও কতক্ষণ ধরে করবেন, তা নিজের সুবিধামতো সাজিয়ে নিন। বইটি সম্পর্কে আরও জানতে পারেন এই ঠিকানায়: miraclemorning.com