যে পাঁচ অভিজ্ঞতা ছাত্রজীবনেই অর্জন করা উচিত

জীবন মানেই তো অভিজ্ঞতা। কিছু ভালো, কিছু মন্দ, কিন্তু দিন শেষে সবই অভিজ্ঞতা। ছাত্রজীবন শেষে যখন পেশাজীবনে প্রবেশ করি, সেখানকার পরিবেশ ভিন্ন। সেখানে যা কাজ দেওয়া হবে, তা কিন্তু ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্টের মতো নয়। ভুল করলে গ্রেড কম আসবে—পেশাজীবনের সমীকরণ এত ‘সহজ’ নয়। তবু ছাত্রজীবনে কিছু অভিজ্ঞতা ঝুলিতে যোগ হলে পেশাজীবনটা সহজ হতে পারে। এমন পাঁচ অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়ার পিএইচডি গবেষক বিপাশা মতিন

শিক্ষাজীবনেই পেশাজীবনের কিছু প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা জরুরি
ছবি: প্রথম আলো

১.

প্রথমেই বলব গবেষণার কথা। গবেষণার কিছু অভিজ্ঞতা থাকা এখন বেশ জরুরি হয়ে পড়েছে। খণ্ডকালীন বাজার গবেষণা (মার্কেট রিসার্চ) কিংবা কোনো শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া—যেকোনো অভিজ্ঞতাই খুব কাজের। এটি যেমন ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার পথ সহজ করবে, তেমনি চাকরিজীবনেও আপনার প্রতি বসের সুনজর থাকবে নিশ্চিত। এমনকি আপনি যদি উদ্যোক্তা হতে চান, সে ক্ষেত্রেও গবেষণার অভিজ্ঞতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে। গবেষণার জন্য বেশ কিছু সংগঠন কাজ করে, তাদের সঙ্গে খণ্ডকালীন গবেষক হিসেবে যোগ দিতে পারেন। অথবা আপনার শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারেন, গবেষণার কোনো সুযোগ আছে কি না। ক্লাসে যেসব অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়, সেগুলোর অংশ হিসেবেও গবেষণা করে অ্যাসাইনমেন্টকে মৌলিক করে তুলতে পারেন। ‘কপি পেস্ট’ করে হয়তো সময় বাঁচাবেন, কিন্তু ছোট এ গবেষণা আপনাকে যে আনন্দ দেবে, তার কিন্তু কোনো তুলনা হয় না। গবেষণা মানেই কিন্তু গুরুগম্ভীর কোনো কাজ নয়, হতে পারে সেটা তথ্য সংগ্রহ কিংবা ডেটা এন্ট্রি। এসব কাজে যুক্ত থেকে হাতখরচের টাকাও জোগাড় করা যায়।

২.

দ্বিতীয়ত বলব—লেখালেখির অভিজ্ঞতা। লেখালেখি যোগাযোগের বড় এক মাধ্যম। তাই ছাত্রজীবনেই লেখালেখির অভ্যাস করা ভালো। বাংলা বা ইংরেজিতে, যেকোনো ভাষায় ভালো লেখার দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে। পত্রিকাগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে লেখা আহ্বান করা হয়। সেখানে লেখা প্রকাশের চেষ্টা করে দেখতে পারেন। অথবা শুধু পত্রিকায় কেন? লেখালেখির অভ্যাস কিন্তু নিজের ফেসবুক পোস্ট দিয়েও শুরু করতে পারেন। কোথাও বেড়াতে গেলে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা লিখুন কিংবা নতুন কোনো পণ্যের রিভিউ লিখুন। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বার্ষিক সাময়িকী বের হয়, সেখানেও লেখা দিতে পারেন। লেখালেখির অভিজ্ঞতাও আপনাকে শিক্ষাজীবন ও পেশাজীবনে সহায়তা করবে।

ক্লাসের প্রেজেন্টেশনগুলোকে স্রেফ আরও একটা অ্যাসাইনমেন্ট না ভেবে কথা বলার একটু সুযোগ ভাবলে ক্ষতি কী? সুন্দর বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন, মোদ্দা কথা, স্বল্প সময়ে যেকোনো ব্যাপার সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারা যে কত বড় গুণ—তা যত দ্রুত বুঝবেন, ততই ভালো

৩.

যোগাযোগের আরেকটি বড় অংশ হলো—মৌখিক প্রেজেন্টেশন বা বক্তব্য উপস্থাপন। ক্লাসের প্রেজেন্টেশনগুলোকে স্রেফ আরও একটা অ্যাসাইনমেন্ট না ভেবে কথা বলার একটু সুযোগ ভাবলে ক্ষতি কী? সুন্দর বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন, মোদ্দা কথা, স্বল্প সময়ে যেকোনো ব্যাপার সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারা যে কত বড় গুণ—তা যত দ্রুত বুঝবেন, ততই ভালো। ছাত্রজীবনে বিভিন্ন ‘প্রেজেন্টেশন কম্পিটিশন’–এ অংশগ্রহণ করুন। বিতর্কে আপনার দক্ষতা থাক বা না থাক, দর্শক হয়েও দেখুন। যুক্তির উপস্থাপনে যে একই কথাকে কতভাবে বলা যায়, তা জানতে পারবেন। এ ছাড়া ‘উপস্থিত বক্তৃতা’ কিংবা ‘নির্বাচিত বক্তৃতা’ প্রতিযোগিতা কিন্তু স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন হয়েই থাকে। ভয় ভেঙে অংশগ্রহণ করুন। আখেরে আপনার লাভই হবে।

৪.

‘টিম ম্যানেজমেন্ট’ বা দল ব্যবস্থাপনা আরেকটি বড় অভিজ্ঞতা, যা ছাত্রজীবনেই আপনি চর্চা করতে পারেন। হ্যাঁ, হতে পারে আপনি একা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, কিন্তু দলের কাজ করার অভিজ্ঞতা আপনার ঝুলিতে জমা থাকলে ক্ষতি কী? বলতে পারেন, এটা আবার অভিজ্ঞতার কী? দলে কাজ করা আর দল ব্যবস্থাপনা—দুটি কিন্তু একেবারেই আলাদা। দলে আপনার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপন করা, দলের সদস্যদের দ্বারা কাজ করিয়ে নেওয়া, দলে বিবাদ মেটানো, এসব কিন্তু সময়ের সঙ্গেই শেখা হয়। তাই চাকরিজীবনে গেলে দেখা যাক কী হয়—এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন। ছাত্রজীবনেই দলে কাজ করা আর দল ব্যবস্থাপনার চর্চা শুরু করুন। ছোট দলের সঙ্গে কাজ করতে না পারলে বড় দলে কীভাবে মানিয়ে নেবেন? ক্লাসে অ্যাসাইনমেন্টে একেকবার একেকজন দলীয় নেতার ভূমিকা রেখে এ অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। তা ছাড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকলেও এ অভিজ্ঞতা সহজেই ঝুলিতে যোগ করা সম্ভব।

৫.

নতুন কোনো সফটওয়্যার, সেটা গবেষণাভিত্তিক হোক কিংবা সৃজনশীল কিছু, এ অভিজ্ঞতা ফেলনা যাবে না। নকশা করার জন্য, ফটোশপ, ক্যানভা, রিসার্চের জন্য মাইক্রোসফট এক্সেল, এসপিএসএস কিংবা এন্ডনোট অথবা ফেসবুকের পেজ চালানোর দক্ষতাও কিন্তু কাজে দেবে ভবিষ্যতে। এখন তো বেশির ভাগ সফটওয়্যারের ফ্রি ভার্সন থাকে, তাই অজুহাত দেখানোর কোনো অবকাশ নেই। আর সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে পারলে তো আরও ভালো। ছাত্রজীবন হেসেখেলে যেমন পার করা যায়, তেমনি ফাঁকে ফাঁকে এ ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো জুড়ে নিলে মন্দ কী? তাতে আশা করি ছাত্রজীবনের রোমাঞ্চ কমবে না, বরং বাড়বে।