যে পূজার সব কাজেই নারীর হাত

ময়মনসিংহ জেলায় ৭৭৬টি মণ্ডপে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহরেই রয়েছে ৭৮টি মণ্ডপ। এর মধ্যে ব্যতিক্রম শিববাড়ী মন্দিরের পূজা উদ্‌যাপন। এই মন্দিরে পূজার সব কাজই করেছেন নারীরা। অর্থ সংগ্রহ, আপ্যায়ন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, মঞ্চসজ্জা, উপকরণ কেনা, প্রসাদ বিতরণ, প্রচারণাসহ সব ব্যবস্থাপনাতেই থাকেন নারীরা। শুধু পৌরোহিত্যের কাজটি করেছেন একজন পুরুষ।

প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় নারী, মা, বধূ, কন্যা, বোনসহ নারীদের ঢল নামে শিববাড়ী মন্দিরে। মন্দির প্রাঙ্গণজুড়ে যেন নারীদের এক মিলনমেলা। এমন নারীবান্ধব পরিবেশে এসে নারীরাও অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলে জানালেন মন্দিরে আসা কয়েকজন নারী।

২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরই এভাবে পূজার আয়োজন করে আসছে নারী শক্তি সংগঠন। এ বছরে এটি তাদের ১১তম আয়োজন। পূজা উদ্‌যাপনে মূল কমিটির পাশাপাশি বিভিন্ন উপকমিটি কাজ করছে। কমিটি ও উপকমিটির সবাই নারী। সার্বিক কাজ দেখভাল করার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটিও রয়েছে।

শিববাড়ীর এই পূজার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সুমিতা নাহা। তিনি বললেন, প্রথমবারের পূজা আয়োজনে ১৩৫ জন নারী যুক্ত ছিলেন। এভাবেই শুরু হয় নারী শক্তির পথচলা। পূজা উদ্‌যাপনে সব সদস্য দৈনিক পাঁচ টাকা করে চাঁদা দেন। সেই অর্থ এবং প্রশাসনিক বরাদ্দ দিয়েই পূজার খরচ মেটানো হয়।

চাঁদা থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে তাঁরা একই নকশা ও রঙের শাড়ি কিনে পূজার সময়ে পরেন। সিঁদুর খেলায় একে অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে আত্মার বন্ধন আরও দৃঢ় করেন। বিসর্জনের দিনেও দল বেঁধে হেঁটে প্রতিমা বিজর্সন দিতে যান নারীরা।

পূজা উদ্‌যাপন ছাড়াও নারী শক্তির সদস্যরা জনকল্যাণমূলক ও সমাজসেবার কাজ করে যাচ্ছেন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, গরিব ও অসহায় মানুষকে সহায়তা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, বন্যাদুর্গতদের সহায়তা, বাল্যবিবাহ বন্ধে সচেতনতা তৈরি এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা কাজ করেন তাঁরা। পূজা উপলক্ষে শারদ সংকলন বোধন প্রকাশিত হয় প্রতিবছর।

নারী শক্তির সদস্যসংখ্যা এখন ২৬৫ জন। আরও কয়েকজন প্রবাসী বাঙালি নারীও রয়েছেন সদস্য হিসেবে। পূজা উপলক্ষে তাঁদের অনেকেই দেশে এসে এ মিলনমেলায় যোগ দেন।

দুর্গাপূজার আয়োজনে শুধু নারীরা কেন? শিববাড়ী মন্দিরের দুর্গোৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুচিত্রা সেন বলেন, দুর্গাপূজায় সব পূজামণ্ডপে আয়োজনের নেপথ্যে থেকে নারীরাই যাবতীয় কাজ করে থাকেন। এ নেপথ্য ভূমিকাকেই সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা বাঁশরী ভট্টাচার্য বলেন, নারীদের সম্মিলিত শক্তিই সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জেগে উঠতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

এ ধরনের আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। পূজা উদ্‌যাপন পর্ষদ ময়মনসিংহ জেলা শাখার পক্ষ থেকে সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানালেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক শঙ্কর সাহা।