রঙিন ফুরফুরে পোশাকে

শিশুদের পোশাকে ফুরফুরে ভাব থাকতেই হবে।ছবি: নকশা

শিশুদের পোশাকে আরাম বাধ্যতামূলক। হালকা কাজ, নরম কাপড় আর আরামদায়ক কাট– এই উপকরণগুলো থাকলে সেও থাকবে স্বস্তিতে।

কোথাও একদণ্ড শান্ত হয়ে বসার জো নেই তার। এখনই তো ছুটে বেড়ানোর সময়। তাই বেড়াতে যাওয়া হোক বা ঘরে থাকার সময়, শিশুর পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে আরামকে। তা না হলে হয়তো সে বুঝিয়ে বলতে পারবে না, কিন্তু পুরো সময়টা কাটাবে চূড়ান্ত বিরক্তির মধ্যে।

শিশুর পোশাকে আরাম নিশ্চিত করতে নজর দিতে হবে কাপড়, রং ও নকশার ওপর। ফ্যাশন হাউস বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, যেকোনো বয়সীর পোশাকেই আরাম খুব জরুরি। আগে মানুষ ভাবতেন, ভালো না লাগলেও পরব, আরাম না লাগলেও পরব। এখন সবাই আরাম খোঁজেন।

আগে চুমকি-পুঁতির ব্যবহার করে শিশুদের জন্যও জবরজং কাপড় তৈরি করা হতো। চেষ্টা করা হতো পোশাকটা যেন ফুলে থাকে। এখন সেসব ভাবনা বদলে গেছে বলেই জানালেন এই ডিজাইনার। তিনি বলেন, শিশুর জন্য কখনো রঙিন পোশাক চান, কখনো হালকা রঙের পোশাকও চান। কেউ নিজের সঙ্গে মিলিয়ে সন্তানের জন্য নেন আর কেউ ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনে পরে তার সঙ্গে মিলিয়ে নিজের জন্যও কিনে নেন।

ছোটদের জন্য পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে পাতলা ভয়েল, সুতি, হ্যান্ডলুম, লিনেন, শিফন—এসব কাপড় নেওয়ার পরামর্শ তাঁর। বিপ্লব সাহা বলেন, মেশানো কাপড় না কেনাই ভালো। এটা দেখতে সুতির মতো কিন্তু ভেতরে সিনথেটিক সুতা থাকে।অনেকে না বুঝে কিনে নেন। পরে দেখা যায় পোশাকটা পরতে আরাম না বা ভেতরে-ভেতরে ঘেমে যাচ্ছে। সে জন্য গজ কাপড় কেনার ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখে নিন পুরোপুরি সুতি কি না। এক কোনায় একটু আগুন দিয়ে দিলে যদি ছাই হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে কাপড়টা সুতি আর যদি গিঁট বেঁধে যায়, তাহলে সুতি নয় নিশ্চিত। কিন্তু তৈরি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

বেশি ঘের, পালাজ্জো বা ওড়নাতে ও বিরক্ত হবে না তো?

পোশাকে শিশুকে আরাম দিতে ডিজাইনের দিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন এই উদ্যোক্তা, শিশুর পোশাকের ডিজাইন সময়োপযোগী হতে হবে। গরমের সময়ে গলাবন্ধ পোশাক না কেনাই ভালো। ছোট হাতা, ম্যাগি হাতা কাপড় পরাতে পারেন শিশুকে। কিছু পোশাকের ভেতরে এমন কিছু লাইনিং করা থাকে, যেটা ওপরে ভালো দেখায় কিন্তু ভেতরে শিশুর খুব অস্বস্তি হয়। অনেক ভারী কাজ থাকলেও শিশু আরাম পাবে না। আবার মা-মেয়ের এক রকম পোশাক বানাতে চাইলে, সন্তান ঠিকমতো বহন করতে পারবে কি না, সেটা বুঝে নিন। বেশি ঘের, পালাজ্জো বা ওড়নাতে ও বিরক্ত হবে না তো? সে ক্ষেত্রে একই কাপড় কিনে নকশা শিশুর উপযোগী করে দিতে পারেন।

ছোট হাতা, ম্যাগি হাতা কাপড় পরাতে পারেন শিশুকে

সময়ভেদে পোশাকের রংও বেছে নেওয়ার পরামর্শ তাঁর। বিপ্লব সাহা বলেন, গরম কম থাকলে উজ্জ্বল রং আর গরম বেশি থাকলে হালকা রং বেছে নিন। রাসায়নিক ডাইতে শিশুর ক্ষতি হচ্ছে মনে হলে প্রাকৃতিক ডাই বেছে নিতে পারেন। শিশুর পোশাকের যত্নও নিতে হবে বাড়তি। শিশুরা পোশাক অনেক বেশি ময়লা করে, তাই ধুতেও হয় বেশি। সে ক্ষেত্রে বিপ্লব সাহার পরামর্শ, এমন কোনো রং নির্বাচন করবেন না যেটার অনেক রং উঠে যায়। ঘেমে গেলে পোশাক একটু শুকিয়ে রাখা যায়। আবার অনেকে পোশাক ঠিকমতো না শুকিয়েই পরিয়ে দেন। এমনটা করাও ঠিক হবে না।

অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন হাউস খুঁতের ডিজাইনার ঊর্মিলা শুক্লার মতে, শিশুর জন্য পোশাকের কাপড়টা সুতি হওয়া জরুরি। হালকা রঙের পাতলা কাপড় হলে বাতাস অনেক চলাচল করতে পারবে। একটু ফ্রিল বা ঘেরের কাজ করা পোশাকের থেকে হালকা কোনো ডিজাইন যেটা চোখকে আরাম দেয়, সেটাই শিশুর জন্যও আরামদায়ক হবে বলে মনে করেন এই ডিজাইনার। তিনি বলেন, কোনো বিশেষ আয়োজনে শিশুর জন্য আলাদা ধরনের কাপড় নিতে পারেন। তবে সেখানেও হালকা রং ও ডিজাইন দিয়ে একটু ভিন্নভাবে বানিয়ে দিতে পারেন পোশাকটা। নিজের উপলব্ধি ঠিকঠাক প্রকাশ করতে অনেক শিশুই পারে না। তাই তার জন্য পোশাক সচেতনভাবে আপনাকেই নির্বাচন করতে হবে।