রাইটার্স ক্র্যাম্প, লিখতে যখন সমস্যা

লেখার জন্য হাতের বিশের বেশি ছোট মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণ প্রয়োজন; এগুলোকে মস্তিষ্ক নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো কারণে হাতের মাংসপেশির কর্মদক্ষতার এই সমন্বয় নষ্ট হয়ে গেলে লেখালেখি করা খুব কঠিন হয়ে যায়। শিক্ষক, লেখক, দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের এই সমস্যা হলে খুবই বিপদে পড়তে হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এই রোগকে রাইটার্স ক্র্যাম্প বলে।

কেন হয়

হাতের ক্ষুদ্র মাংসপেশিগুলোর ওপর মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে রাইটার্স ক্র্যাম্প হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না।

লক্ষণ

সাধারণত যে হাত দিয়ে লেখালেখির কাজ করা হয়, সেই হাতেই এ সমস্যা দেখা দেয়। আক্রান্ত হাতে লেখার সমস্যা ছাড়া অন্য কোনো কাজে তেমন সমস্যা হয় না। লিখতে গেলে রোগীর হাত ধরে আসে, ব্যথা করে, লেখা আগের মতো আর সুন্দর হয় না ও লেখার গতিও কমে যায়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে আস্তে আস্তে লেখালেখি করা রোগীর জন্য দুরূহ হয়ে যায়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

রাইটার্স ক্র্যাম্প নির্ণয়ের জন্য সাধারণত কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা দেখেই এই রোগ নির্ণয় নিখুঁতভাবে করতে পারেন।

চিকিৎসা

রাইটার্স ক্র্যাম্পের চিকিৎসাকে দুই ভাগে ভাগ করতে যায়—পরামর্শ ও ওষুধ। রোগীর প্রতি পরামর্শ হলো, এই রোগ নিয়ন্ত্রণযোগ্য, তবে পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। আক্রান্ত রোগীর সাধারণত এক হাত এই রোগে আক্রান্ত হয়; তাই রোগ দেখা দেওয়ার প্রথম থেকেই অন্য হাত দিয়ে লেখার চেষ্টা করা উচিত, যাতে একসময় রোগী সুস্থ হাত দিয়ে লিখতে পারে। অপেক্ষাকৃত মোটা আকৃতির কলম ব্যবহার করলে রাইটার্স ক্র্যাম্পের রোগীরা সহজে লিখতে পারেন। জোর করে বা চাপ নিয়ে লেখালেখি করতে যাবেন না। দরকার হলে কিছুদিন বিশ্রাম নিন। দুশ্চিন্তামুক্ত অবস্থায় লেখালেখি করলে এই রোগের রোগীরা সবচেয়ে ভালো ও দ্রুত লিখতে পারেন। নিয়মিত হাতের ব্যায়াম করুন।

ওষুধ

ট্রাইহেক্সিফেনিডিল ও টেট্রাবেনাজিন জাতীয় ওষুধ এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে; তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়। এক ধরনের ইনজেকশন এই রোগের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। এটি এখন বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেই দেওয়া হয়।

রাইটার্স ক্র্যাম্প ছাড়াও আরও অনেক রোগের কারণে হাতের লেখায় সমস্যা হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় এসব সমস্যা ভালো হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডা. নাজমুল হক, সহকারী অধ্যাপক, নিউরোলজি,মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা