রাত জাগার টোটকা!

আপনাকে কি অফিসে নিয়মিত রাতের পালায় কাজ করতে হয়? কিংবা সারা রাত জেগে কাজ করা ছাড়া মাথা থেকে কাজের বোঝা নামানোর আর কোনো উপায় নেই? নাকি পড়ালেখার জন্য সারা রাতই জেগে থাকতে হয়? আপনি এর যে দলেরই হন না কেন, রাত জাগার বিষয়ে হয়তো চিকিত্সকেরা আপনাকে কখনোই উত্সাহিত করবেন না। তবে রাত জেগে কাজ করতে হলে সে জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া আর কিছু অভ্যাস আয়ত্ত করাটা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শসহ বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে জানিয়েছে।
মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক কেভিন মরগান যুক্তরাজ্যের লোবরোহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল স্লিপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। ঘুম বিশেষজ্ঞরা সাধারণত রাত জেগে কাজ করার পক্ষে মত না দিলেও অধ্যাপক মরগান অবশ্য মনে করেন রাতে কাজ করার কিছু সুবিধা আছে। তাঁর মতে, ‘রাতে কাজে মনোযোগহানির সুযোগ কম থাকে’ এবং ‘আপনি আপনার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।’
রাতে কাজ করার বিষয়ে কেউ উত্সাহ দিক বা না দিক, আমাদের অনেকেরই হয়তো বাস্তবতা সেটাই। সাম্প্রতিক কিছু জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ছাত্রছাত্রী এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যেও সারা রাত জেগে কাজ করার হার ভালোই। আর আজকাল তো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতে কাজের পরিবেশের সুযোগ একটা আবশ্যিক অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা রাতের জন্য রিডিং রুম খোলা রাখা হয়। আর ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার রুম সারা রাত খোলা থাকে। সে যা-ই হোক, নিয়মিত ঘুম-বঞ্চিত হলে আপনার বারোটা বাজতে বেশি দেরি হবে না! তাই রাত জেগে কাজ করতে হলে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে নিন।
নিয়মিত ঘুম ও আগাম ঘুম
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক চার্লস সাইজলার মনে করেন, রাত জাগার আগে একটু আগাম ঘুমিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এতে করে ঘুমহীন রাত কাটালে কর্মদক্ষতার যে ঘাটতি দেখা যায়, তা হবে না। নিয়মিত ঠিকঠাক ঘুমানোর অভ্যাস করতে পারলে হঠাৎ করে রাত জেগে কাজ করার ঝক্কি পোহানোটা বরং সহজ। তিনি বলেন, ‘খামোখা নিজেকে ঘুম-বঞ্চিত করে রাখবেন না। নিয়মিত ঘুমালেই বরং রাত জেগে কাজের সুবিধা।’
নিজেকে পুষ্টি জোগান
পাউলা মি পেশায় পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শদাতা এবং ব্রডকাস্টার। ডাবলিনে বসবাসকারী এই ব্রডকাস্টারকে প্রায়ই রাত জেগে কাজ করতে হয়। এই পুষ্টিবিদ বলেন, ‘প্রোটিন আমাদের সজাগ থাকতে সাহায্য করে।’ পাউলা বলেন, ‘যে রাতে জেগে থেকে কাজ করতে হবে, সেদিন সন্ধ্যায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। হতে পারে সেটা মুরগি বা গরুর মাংস বা মাছ। বেশি কার্বোহাইড্রেট আমাদের ঘুমকাতুরে করে তুলতে পারে।’ সন্ধ্যায় ভালো করে খেয়ে নিলে হয়তো রাতে আবার ভরপেট খাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু মাঝরাতে খাওয়ার জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ কিছু হালকা খাবার সঙ্গে রাখুন।
উজ্জ্বল আলোয় কাজ করুন
ফরাসি স্নায়ু-জীববিজ্ঞানী এবং ফ্রান্সের স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা গবেষণা জাতীয় ইনস্টিটিউটের পরিচালক জোয়েলে অদ্রে বলেন, ‘আলো আমাদের দেহঘড়ির জন্য সজাগ থাকার সংকেত পাঠায় এবং আমাদের বলে যে, এখন সজাগ ও সক্রিয় থাকার সময়।’ ফলে রাতে উজ্জ্বল আলোতে কাজ করা প্রয়োজন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আলোটা যেন সঠিক রঙের হয়। তিনি জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, উজ্জ্বল নীলাভ আলো সজাগ থাকার জন্য ভালো এবং হলুদাভ আলো আমাদের স্নায়ুগুলোকে শিথিল করে দেয় বলে তা রাত জাগার জন্য ভালো নয়।
কাজের পরিকল্পনা করে নিন
মনোবিজ্ঞানী কেভিন মরগান বলছেন, ঘুম বঞ্চিত হয়ে রাত জেগে কাজ করার সময় মস্তিষ্কের বিশ্লেষণী ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই রাতের পালায় কাজ করতে হলে একটা আগাম কর্মপরিকল্পনা করে নিলে ভালো হয়। তিনি বলেন, ‘আপনার কাজগুলো দুই ভাগে ভাগ করে নিন। বিশ্লেষণ ও চিন্তাভাবনা করতে হবে, এমন কাজ এক ভাগে রাখুন। রুটিন-মাফিক করার মতো অভ্যস্ততার কাজগুলো আরেক ভাগে রাখুন। আর অবশ্যই মগজ খাটানোর কাজগুলো রাতের প্রথম ভাগে করুন।’
চা-কফির জোগান রাখুন
শরীরকে ক্লান্ত করে দেয় এমন হরমোনকে নিষ্ক্রিয় করে আমাদেরকে চাঙা করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে চা-কফিতে থাকা ক্যাফেইন। সারা রাত জেগে কাজের সময় নিয়মিত বিরতিতে ঘণ্টা দুয়েক পর পর এক কাপ করে চা বা কফি পানের অভ্যাস করতে পারেন। এতে ক্লান্তি দূর হবে আর কাজ থেকে একটু বিরতি নেওয়ায় হবে।
নিজেকে উষ্ণ রাখুন
কিছুটা ঠান্ডা পরিবেশ ঘুমের জন্য সহায়ক। ফলে ঘুম তাড়াতে হলে ঘরটা একটু উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন। যেখানে কাজ করছেন সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলে ঘরের তাপমাত্রা বেশি শীতল না রেখে একটু উষ্ণ রাখুন। আর মনে রাখতে পারেন, সাধারণ রুটিনে থাকলে স্বাভাবিক অবস্থায় রাত তিনটা থেকে চারটার দিকে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি কমে আসে। ফলে এ সময়টা পার করার বিষয়ে সজাগ থাকুন।
রাত জাগার পরের ঘুম
আপনার রাতের পালায় কাজ শেষে ঘুমের বিষয়টা খুবই জরুরি। তবে, রাতে কাজ করা যদি নিয়মিত বিষয় হয়, তাহলে ঘুমের ধরন এক রকম হবে আর হঠাত্ একদিন রাত জাগতে হলে তা আরেক রকম। নিয়মিত রাত জাগলে সকালে কয়েক ঘণ্টার পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করুন। আর তা হঠাৎ এক রাতের বিষয় হলে সকালে ৯০ থেকে ১০০ মিনিটের একটা ঘুম দিন। তাহলেই সারাদিন মোটামুটি স্বাভাবিক থাকতে পারবেন এবং পরের রাতের ঘুমেও সমস্যা হবে না। কিন্তু সকালে অনেক বেশি ঘুমালে আবার ঘুমের স্বাভাবিক রুটিনে ফিরতে সমস্যা হতে পারে।