র্যাম্পের মডেল ছেড়ে মাঠের গরুর ফটোগ্রাফি!

ছবি: টনি মেনেগুজ্জো/দ্য গার্ডিয়ান
ছবি: টনি মেনেগুজ্জো/দ্য গার্ডিয়ান

ফ্যাশন-ফটোগ্রাফির তীর্থ ইতালির মিলানে প্রায় ৩০ বছর ধরে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন টনি। কিন্তু মিলানের র্যাম্প মডেলদের ছেড়ে ভারতে এসে কাজ করেছেন হাটে-মাঠের গরুর ছবি তুলতে। ছয় বছর ধরে প্রত্যন্ত গ্রামে আর নগরে-বন্দরে ঘুরে তিনি ছবি তুলেছেন প্রায় শ খানেক গরুর। অবশ্য তিনি মনে করেন না র্যাম্পে মডেলদের ছবি তোলার কাজের চেয়ে এটা খুব বেশি ভিন্ন কিছু—গরুর ছবি তোলার সময় ওদের সেইসব ‘মডেলদের’ মতোই মনে হয়েছে তাঁর, একটা মোক্ষম ভঙ্গির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে বহু সময়। এমনকি ২০ দিন ঘুরে ছবি তুলতে পেরেছেন মাত্র একটিই। এ খবর জানিয়েছেদ্য গার্ডিয়ান।

গরুর বাঁকানো চিকন পা, মায়াবী চোখ, অভিজাত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা। ফ্যাশন জগতে তিলোত্তমা র্যাম্প মডেলদের ছবি তোলার চেয়ে খুব কি ভিন্ন কিছু! আলোকচিত্রী টনি মেনেগুজ্জো বলেন, ‘একভাবে বিষয়টা একই, এটা মডেলদের ছবি তোলার মতোই।’

ছবি: টনি মেনেগুজ্জো/দ্য গার্ডিয়ান
ছবি: টনি মেনেগুজ্জো/দ্য গার্ডিয়ান



‘আমি একটা ভালো কম্পোজিশনের জন্য অপেক্ষা করছি। গরুর চারটা পা’ই দেখা যাচ্ছে, একটা ভালো প্রোফাইল পাওয়া গেল, হয়তো একটু সামনে একটু ঝোঁকানো, ঘাড় বাঁকিয়ে মাথাটা সরাল। ফ্যাশন মডেলদের মতোই গরুরও হাঁটাচলা-অঙ্গভঙ্গির এমন সব আভিজাত্য আছে।’ এভাবেই মিলানের মডেল-ফটোগ্রাফির সঙ্গে ভারতের পূজায়-পার্বণে গরুর ছবি তোলার অভিজ্ঞতার তুলনা টেনে কথা বললেন এই আলোকচিত্রী। ভারতের তামিলনাড়ুর তীর্থ-কেন্দ্র অরুভিলেতে চার দিনব্যাপী এক নবান্ন উত্সবেই প্রথম দারুণভাবে সাজানো গরুর ছবি তুলেছিলেন মেনেগুজ্জো।

একটা গরুকে যেভাবে আদর-যত্নে গোসল করিয়ে ফুলের মালা, গয়না আর রঙে রাঙিয়ে সাজানো হয়, তা দেখে গভীরভাবে আন্দোলিত হয়েছিলেন মেনেগুজ্জো। তিনি বলেন, ‘যেভাবে গরুর গায়ে রং করা হয় বা ছবি আঁঁকা হয়, তা দেখে আমার জ্যাকসন পলকের কাজের কথা মনে হয়েছে। গরুর চামড়াটাই এখানে ক্যানভাস। এটা আধুনিক শিল্প।’

ছবি: টনি মেনেগুজ্জো/দ্য গার্ডিয়ান
ছবি: টনি মেনেগুজ্জো/দ্য গার্ডিয়ান

কয়েক বছর ধরে ভারতে ঘুরে ঘুরে এই কাজে নিজেকে জড়িয়ে অনেক কিছুই শিখেছেন মেনেগুজ্জো। প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকেরাও তাঁকে ‘গো-শালায়’ ঢুকতে দিয়েছেন। নিজেদের পবিত্র মর্যাদার কারণে হাল-চাষের গরুদের তুলনায় রীতিমতো রাজসিক হালে থাকে এসব গো-শালার গোরুগুলো। উত্সব উদযাপন এবং পূজা-পার্বণের জন্য সাজানো হয় এদের। এ আলোকচিত্রী জানান, তাঁকে গরুর ছবি তুলতে দেখে স্থানীয় মানুষেরা খুশিই হয়েছেন।

ছবি: টনি মেনেগুজ্জো/দ্য গার্ডিয়ান
ছবি: টনি মেনেগুজ্জো/দ্য গার্ডিয়ান



গ্রামে গ্রামে তোলা গরুর ছবিগুলোকে কেটে নিয়ে সম্পূর্ণ সাদা পশ্চাত্পটে তা ব্যবহার করেছেন মেনেগুজ্জো। তাঁর ভাষায় যেন গোরুগুলো ওদের নিজেদের দুধেই ভাসছে। আর তাঁর এমন অনুভূতিও হয়েছে যে, গোরুগুলোকে তিনি বুঝতে শিখেছেন। কীভাবে ডাকলে একটা গরু শুনবে, তাঁর দিকে তাকাবে তাতে অভ্যস্ত হয়েছেন তিনি। অবশ্য এ জন্য তাঁকে অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে। এমনও হয়েছে যে, টানা ২০ দিন কাজ করে একটাও ছবি তুলতে পারেননি তিনি।

এই আলোকচিত্রী আরও জানান, নিয়মিত পেশাদার কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব ব্যক্তিগত পছন্দের কাজই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে। ভারতে গরুর ছবি তোলার পর এবার মেনেগুজ্জো যাবেন আর্জেন্টিনায়। সেখানে গ্রামীণ ডাকাতদের ছবি তুলবেন তিনি।