লেপ সেলাই করে স্বাবলম্বী

১০ বছর আগে রহিমা বেগম শুরু করেছিলেন লেপ সেলাইয়ের কাজ। তখন নিজেই জানতেন না এই কাজ সংসারে সচ্ছলতা আনবে কি-না। এখন কেবল তাঁর সংসারে নয়, লেপ সেলাই করে সচ্ছলতা এসেছে পশ্চিম কাঁঠালতলী গ্রামের বাসিন্দাদের। তাঁর দেখানো পথ ধরে গ্রামের প্রত্যেক নারী লেপ সেলাই করে বছরে আয় করছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
পশ্চিম কাঁঠালতলী গ্রামটি লোকমুখে কাদের শিবির নামে পরিচিত। গ্রামে ১৩০টি পরিবারের বসবাস। আশ্বিন থেকে মাঘ এই চার মাস প্রায় প্রতিটি পরিবারের নারীরা ব্যস্ত থাকেন এই কাজে। এলাকার অধিকাংশ পুরুষ দিনমজুর। এক সময় সংসার চলত না। রহিমা বেগম তখন পথ দেখালেন গ্রামের নারীদের। আর তাতে সবার দিনও ফিরেছে। সংসারে আগের সেই টানাটানি এখন অতীতের কথা।
উপজেলার বোয়ালখালী নতুন বাজারের মূল সড়ক পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে কিছুক্ষণ এগোলেই একটি পাহাড় চোখে পড়ে। এই পাহাড়ের ওপরেই গ্রামটির অবস্থান। সম্প্রতি গ্রামটিতে গেলে চোখে পড়ে, সারি সারি মাটির ঘরের আঙিনাজুড়ে চলছে লেপ সেলাইয়ের কাজ।
রহিমা বেগমের বাড়ির উঠানেও এই দৃশ্য দেখা গেল। রহিমা বেগমের নেতৃত্বে পাঁচজন লেপ সেলাই করছিলেন। কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। রহিমা জানান, স্বামী আবু তাহের ২০০০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তিন সন্তানের জননী রহিমা দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। তবে বছর দশেক আগে প্রথম লেপ সেলাইয়ের কাজ নেন। এরপর তাঁর সংসারে অভাব দূর হয়েছে। এক ছেলে এখন মাদ্রাসার শিক্ষক, মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে ব্যবসা করেন। লেপ সেলাই করে প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। প্রথম যখন চুক্তিতে লেপ সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছিলেন তখন প্রতিটি লেপের জন্য পেতেন ১০ টাকা। আর এখন পান ৬৫ টাকা।
রহিমা কেবল নিজের আয় বাড়িয়ে থেমে থাকেননি। গ্রামের নারীদের যুক্ত করেছেন এই কাজে। প্রথমে সাতজন নারীকে নিয়ে লেপ সেলাই করা শিখিয়েছিলেন। এখন এক শ নারী লেপ সেলাইয়ের কাজ করেন।
গ্রামের প্রতিটা উঠানে নারীরা লেপ সেলাইয়ের ব্যস্ততা দেখা গেল। ইয়াসমিন আক্তার (২০) নামের এক নারী বলেন, ‘রহিমা আপার তত্ত্বাবধানে লেপ সেলাই করে গত বছর আমি ২০ হাজার টাকা আয় করেছি। এ বছর ৩০ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।’
গ্রামের আরেক বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মিরা বড়ুয়া (৩৫) নামে এক নারী লেপ সেলাই করছেন। পাশে তাঁর স্বামী সুব্রত বড়ুয়া লেপের কাপড়ে তুলা ভরছেন। মিরা জানান, গত তিন বছর থেকে তিনি লেপ সেলাইয়ের কাজ করছেন। প্রতিটি লেপের জন্য পান ৬৫ টাকা। লেপ সেলাইয়ের টাকায় তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আর মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।
বোয়ালখালী নতুন বাজারের লেপের পাইকারি ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জানান, গত শীত মৌসুমে পশ্চিম কাঁঠালতলী গ্রামের নারীদের দিয়ে এক হাজার ৮০০টি লেপ সেলাই করিয়েছেন তিনি। এ বছর আড়াই থেকে তিন হাজার লেপ সেলাই করানো লক্ষ্যমাত্রা আছে তাঁর। রহিমার মাধ্যমেই গ্রামের নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। প্রতিটা লেপের পাইকারি দাম চার শ টাকা ও খুচরা দাম সাড়ে চার শ টাকা।