শিক্ষক ও ছাত্রীনিবাস সংকটে কক্সবাজার সরকারি কলেজ
কক্সবাজার সরকারি কলেজে শিক্ষকসংকট প্রকট হয়ে উঠছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া, ছাত্রীনিবাসের অভাবে দুর্গম এলাকার গরিব ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে থাকার সুযোগ না পেয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
১৯৬২ সালে শহরতলির লিংকরোড এলাকায় ১৭ দশমিক ৭৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে বর্তমানে বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, গণিত ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স এবং চারটি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু আছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজে বর্তমানে সাত হাজার ৯০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকের পদ আছে ৬৪টি। এর মধ্যে ২১টি পদই খালি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ৬৪ জনের অতিরিক্ত ৪৬ জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টির জন্য ২৭ মে উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।
কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী কামরুন্নাহার বলেন, কলেজে শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেকই ছাত্রী। এর মধ্যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার ছাত্রী রয়েছেন হাজারেরও বেশি। এসব ছাত্রীর জন্য ১০০ আসনের একটি ছাত্রীনিবাস থাকলেও এতে ১৮৪ জন শিক্ষার্থী থাকেন গাদাগাদি করে। আসন সংকুলান না হওয়ায় অনেকে আশপাশের এলাকায় ভাড়া ঘরে মেস করে থাকেন। কিন্তু অনেক গরিব শিক্ষার্থী অর্থাভাবে ভাড়া ঘরে থাকতে না পেরে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজটি অবহেলিত ছিল। গত এপ্রিল মাসে অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন।
সরেজমিন পরিদর্শন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে পাঁচ তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন-কাম পরীক্ষা হল নির্মিত হচ্ছে, যার ৮০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রায় তিন কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনটি নির্মাণ করছে।
প্রায় ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন বিজ্ঞান ভবনের সম্প্রসারণ ও প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন দিকে সীমানাপ্রাচীর তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে।
এ ছাড়া, শিক্ষার্থীদের বেতন ও বিভিন্ন বিষয়ে ফি জমা দেওয়ার জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে একটি ব্যাংকের শাখা খোলা, কলেজের মূল ভবন ও হোস্টেলে পানি সরবরাহ ও কলেজের প্রবেশপথের সড়কটির উন্নয়ন করা হয়েছে।
কলেজের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘কলেজে বর্তমানে নানা রকম অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা সবাই খুশি হলেও আমাদের অন্যতম দাবি শিক্ষক ও ছাত্রীনিবাস সংকটের সমাধান না হওয়ায় অনেকেই হতাশ।’
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি যোগ দেওয়ার পর বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ছাত্রীদের জন্য আরেকটি ছাত্রীনিবাস নির্মাণ, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগসহ সব বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য যানবাহন সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং ইংরেজি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর অনুমতি পেয়েছি। ২০ নভেম্বর থেকে এ দুটি বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়েছে। আশা করি, সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় বাকি সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’