
নিবন্ধন করবেন যেভাবে
বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন আইন ২০০৫ অনুসারে, শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে হলে আগে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এ আইন অনুসারে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) থেকে নিবন্ধিত ও প্রত্যায়িত না হলে কেউ কোনো বেসরকারি স্কুল বা কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে পারবেন না। স্কুল বা কলেজে শিক্ষক হওয়ার জন্য আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় অর্থাৎ উভয় পদের জন্য আলাদা আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ জন্য প্রশ্নপত্র থেকে শুরু করে সিলেবাস, সবকিছুই আলাদা।
আবেদনের যোগ্যতা
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক হতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কারও অধিকতর যোগ্যতা থাকলেও আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কিন্তু পরীক্ষায় অবতীর্ণ কোনো প্রার্থীর আবেদন এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়, তবে সদ্য পাস করা প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া প্রশংসাপত্র, টেব্যুলেশন শিট, মার্কশিট, প্রবেশপত্রসহ আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আবেদনের জন্য প্রার্থীর সমগ্র শিক্ষাজীবনে যেকোনো একটিমাত্র তৃতীয় বিভাগ বা এর সমমনা জিপিএর ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে, এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাজীবনে তৃতীয় বিভাগ বা এর সমমনা জিপিএ একবারের বেশি হলে প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন।
পরীক্ষা পদ্ধতি
স্কুল ও কলেজ উভয় ক্ষেত্রেই বাংলা, ইংরেজি, গণিত এই তিনটি বিষয়ের পাশাপাশি একটি ঐচ্ছিক বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। আবশ্যিক বিষয়গুলোর ওপর নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় ক্ষেত্রেই পরীক্ষার মোট নম্বর ২০০। এ ক্ষেত্রে ১০০ আবশ্যিক এবং ১০০ ঐচ্ছিক। পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০। আবশ্যিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে। এ ক্ষেত্রে এক ঘণ্টার মধ্যে উত্তর করতে হয় ১০০টি প্রশ্নের। প্রতিটি সঠিক উত্তরের মান এক নম্বর। তবে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মোট নম্বর থেকে কাটা যাবে শূন্য দশমিক ৫ নম্বর। প্রতিটি বিষয় থেকে মোট প্রশ্ন থাকে ২৫টি। তবে ঐচ্ছিক বিষয়ের পরীক্ষা হয় লিখিত। এ ক্ষেত্রে তিন ঘণ্টায় উত্তর করতে হয় ১০০ নম্বরের। লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত পাঁচটি রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর করতে হয়, প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ থাকে ১৫ নম্বর। এ ছাড়া পরীক্ষায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে পাঁচটি, প্রতিটির মান ৫ নম্বর। প্রতিটি প্রশ্নের একটি করে বিকল্প প্রশ্ন থাকে। পরীক্ষার হলে বিষয় কোড, সেট নম্বর ও রোল নম্বর আবশ্যিক বিষয়ের ওএমআর উত্তরপত্রের নির্দিষ্ট স্থানে এবং ঐচ্ছিক বিষয়ের উত্তরপত্রে ওএমআরের প্রথম অংশের নির্ধারিত স্থানে লিখতে হবে ও বৃত্ত ভরাট করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইনে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে হয়। এ জন্য ntrca.teletalk.com.bd এই ঠিকানায় গিয়ে যথাযথভাবে ফরম পূরণ করে নিবন্ধন করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সমপন্ন হলে পরীক্ষার্থীকে একটি নম্বর দেওয়া হয়। এই নম্বর দিয়ে যেকোনো টেলিটক মোবাইল থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ ৩৫০ টাকা প্রদান করতে হয়। আবেদন করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টাকা জমা দিতে হয়, অন্যথায় আবেদনপত্র বাতিল বলে গণ্য করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার পর প্রার্থীকে ইনভয়েস নম্বর এবং পাসওয়ার্ডের সিরিয়াল নম্বর ফিরতি এসএমএসয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। এই পাসওয়ার্ড ও ইনভয়েস নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হয়। অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্রের একটি প্রিন্টেড কপি সংরক্ষণ করতে হয় এবং এসএমএসয়ের মাধ্যমে পাওয়া সিরিয়াল নম্বরটি প্রিন্ট কপির নির্দিষ্ট স্থানে উল্লেখ করতে হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদনপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার্থীর স্বাক্ষর ও নীল ব্যাকগ্রাউন্ডযুক্ত পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি স্ক্যান করে আবেদনপত্রের নির্দিষ্ট স্থানে সংযুক্ত করতে হয়। আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপির সঙ্গে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, নম্বরপত্র, প্রশিক্ষণ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নাগরিকত্বের সনদ ইত্যাদি প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত করে সংযুক্ত করে ডাকবাক্সের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। এ জন্য ‘স্কুল শিক্ষক নিবন্ধন’ পরীক্ষার্থীদের হলুদ খামে এবং ‘কলেজ শিক্ষক নিবন্ধন’ পরীক্ষার্থীদের খাকি খামে করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ, নায়েম ক্যাম্পাস, একাডেমিক ভবন (ষষ্ঠ তলা), ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫ এই ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠাতে হবে। খামের ওপর অবশ্যই কততম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র, পদের নাম এবং বিষয়ের নাম স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে।
ফলাফল প্রকাশ
ফল প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সনদপত্র পাঠানো হয় স্থায়ী ঠিকানার জেলা শিক্ষা অফিসে। এর আগে ওয়েবসাইটে দেওয়া ফলাফল সাময়িক প্রত্যয়নপত্র হিসেবে ধরা হয়।