শিক্ষা আর সংস্কৃতির বিনিময়

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা, সুসি প্রোগ্রামের সমন্বয়কারীর সঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা, সুসি প্রোগ্রামের সমন্বয়কারীর সঙ্গে

পাক্কা দেড় মাস থাকা হলো যুক্তরাষ্ট্রে। দেখা হলো এই স্বপ্নের দেশের তিনটি শহর এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করা হলো শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিনিময়।
সম্প্রতি দেশে ফিরেছি। কিন্তু সেই স্মৃতির রেশ এখনো মনজুড়ে উজ্জ্বল। বলছি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আয়োজনে স্টাডি অব ইউএস ইনস্টিটিউটস (সুসি) প্রোগ্রামের কথা। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের সুযোগ পাই আমরা কজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাহমুদা সুলতানা ও আমি ইমরান আহসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়েশা বিনতে তাওহিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার সামস বিন শরিফ এবং ইউল্যাব থেকে বুশরা জেরিন। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ের এই প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকার তিন শহর—সিয়াটল, শিকাগো ও ওয়াশিংটন ডিসিতে। সুসি প্রোগ্রামের এবারের বিষয় ছিল: ‘জার্নালিজম অ্যান্ড নিউ মিডিয়া’। উন্নয়ন অধ্যয়নের ছাত্র হয়ে গণমাধ্যম নিয়ে পড়তে গিয়ে জানতে পেরেছি, কীভাবে একটি দেশের গণমাধ্যম উন্নয়নের সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। আরও জানতে পেরেছি, কীভাবে তা ক্ষমতাসীন সমাজপতিদের হাতের কলকাঠি হয়, আবার কীভাবে তাঁদের বিরুদ্ধেই গণমাধ্যম রুখে দাঁড়ায়।
সুসি প্রোগ্রামে একাডেমিক পাঠদানের পাশাপাশি আমাদের জন্য ছিল বিভিন্ন ধরনের নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ। আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মিডিয়া হাউস ভ্রমণ ছিল পাঠ্যসূচির অংশ। একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধ—গণমাধ্যমের এই ভূমিকার কথা জানতে পেরে বিস্মিত হই।
এই প্রোগ্রাম শুরু হয় সিয়াটল ভ্রমণ দিয়ে। সেখানে প্যাক ফরেস্ট, মাউন্ট রেইনিয়ার, লেক ২২ ভ্রমণ করি। সেখানে বেইন ব্রিজও দেখার সুযোগ হয়। অভিজ্ঞতা হয়েছিল ‘হোস্ট ফ্যামিলি’তে থাকার। এভাবে ঘোরের মধ্যেই কেটে যায় সিয়াটলের দিনগুলো।
এরপর শিকাগোতে যাই। এখানে দেখার সুযোগ হয় ‘আফ্রিকান-আমেরিকান হিস্ট্রি মিউজিয়াম’ আর বিখ্যাত বাঙালি স্থপতি ফজলুর রহমান খানের নকশায় নির্মিত সিয়ার্স টাওয়ার। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ, পাবলিক রেডিও হাউস ভ্রমণ এবং লেক মিশিগানে রিভার ক্রুজের অসাধারণ অনুভূতির কথা না হয় না-ই বললাম।
মার্কিন মুলুক সফরের সমাপনী পর্ব শুরু হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। হোয়াইট হাউস দর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ডিসির দিনগুলো। ক্যাপিটাল বিল্ডিং, লিংকন মেমোরিয়াল, থমাস জেফারসন মেমোরিয়াল, এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়াম ও ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম ভ্রমণ ছিল এই সফরের অন্যতম অনুষঙ্গ।
বিশ্ববিখ্যাত গণমাধ্যম জাদুঘর ‘নিউজিয়াম’ দেখার অভিজ্ঞতা আলাদা করে বলতে হয়। ১৪৫৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন সংবাদপত্রের ইতিহাস বহন করে আছে জাদুঘরটি।
অসাধারণ একটি অনুভূতির কথা বলে শেষ করব। এই সফরে শিক্ষার্থীদের মিডিয়া পাঠের অংশ হিসেবে প্রত্যেককে একটি করে সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে উপস্থাপনের জন্য এসব প্রতিবেদন থেকে সেরা পাঁচ প্রতিবেদন নির্বাচন করা হয়। শীর্ষ পাঁচের মধ্যে আমার লেখা প্রতিবেদনটিও নির্বাচিত হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করতে গিয়ে আমি আর আমার মধ্যে ছিলাম না। মনে হয়েছে আমিই বাংলাদেশ। এভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বহুদূর।