শীতের চাদরে চলতি ধারা

নকশা আর ওম দুটোই পাওয়া যাবে ভেলভেটের চাদরে।মডেল: ওশিন, চাদর: মিথ, সাজ: জারাস বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: কবির হোসেন

চাদরে ওম আর মায়া দুটোই যেন জড়িয়ে থাকে। শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় খাদি, ভেলভেট কিংবা সুতির চাদরে পাওয়া যায় উষ্ণতা। নানা ধরনের নকশার কারণে পাওয়া যায় ভিন্ন লুক। ঘরে কিংবা দাওয়াতে মানিয়ে যায় সব পোশাকের সঙ্গেই।

শীতকালে একটা চাদর জড়িয়ে নিলে আরাম ভালোই পাওয়া যায়। হিমশীতল আঁচড় থেকে বাঁচতেই তো এই আয়োজন। প্রয়োজন তো মিটবেই, সঙ্গে নাহয় হোক ফ্যাশনটাও। ইতিহাসে পাশ্চাত্য ধারার সঙ্গে চাদর নামের এক প্রস্থ মোটা কাপড়ের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হলেও ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে কিন্তু পশ্চিম ইউরোপে জনপ্রিয়তা পায় চাদর বা শাল। প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে মূলত প্রাচ্যের আভিজাত্যের সম্ভারেই মেলে এমন পোশাকের খোঁজ। মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় আসিরীয় যুগে চাদর বা শাল ব্যবহারের কথা জানা যায়। ঝালর দেওয়া রেশমি চাদর তৈরি হতো চীনে। কাশ্মীরের পশমি চাদরের জনপ্রিয়তা আজও হারিয়ে যায়নি।

খাদির চাদরে চিরায়িত রূপ। চাদর: রঙ বাংলাদেশ

ইতিহাসের খটমটে কথা থাক। কাব্যের ঝরনাধারায় একটু আয়েশ করে নেওয়া যাক। চাদরের কাব্যিক বর্ণনা তো কাব্যসাহিত্য থেকেই পাওয়া। জীবনানন্দ দাশের ‘হেমন্ত’ কবিতার লাইন—

‘শাদা চাদরের মত কুয়াশার নিচে শুয়ে!’

কিংবা শামসুর রাহমানের ‘স্বপ্ন জাগরণের সীমানায়’ কবিতার ‘জ্যোৎস্নার চাদর বিছানো প্রান্তর’-এর কথা একটু না আনলে কি আর চাদরের কাব্যিকতার প্রকাশ হলো!

যাক, ঢের হয়েছে ইতিহাস জানার চেষ্টা আর কাব্যরস আস্বাদন। আমাদের জীবনযাপনে পৌষের শীত চলছে হিম হিম আমেজে। মাঘ মাস আসন্ন। মাঘের শীতে নাকি বাঘ কাঁপে! কাঁপাকাঁপি থেকে বাঁচতে এবার এ যুগের ডিজাইনারদের করা ভিন্নধারার চাদরের দিকে তাকানো যাক। গদ্য-পদ্য নাহয় চাদর মুড়ি দিয়ে চা–পানের সময় আয়েশ করে পড়া যাবে।

কুয়াশাময় সকালে সাদা চাদর তো মানিয়েই যায়...

ডেনিম চাদরে অনন্য

সারা লাইফস্টাইল লিমিটেডের ফ্যাশন ডিজাইনার সিলভিয়া স্বর্ণা জানালেন, চলতি ধারায় অভিনবত্ব আনতে ডেনিম কাপড়ের চাদর দেখা যাবে এ বছর। সিলিকন ব্যবহার করে ধোয়ার (ওয়াশ) কারণে আরামদায়ক, নরম ও হালকা হয় এসব চাদর। তাই হালকা শীতেও কাজে লাগে। ডেনিম যেমন তরুণদের কাছে গ্রহণযোগ্য, তেমনি আবার এই কাপড়ের চাদর তাঁদের জন্যও মানানসই, বয়স যাঁদের একটু বেশি। নীল রঙের বিভিন্ন শেডের ডেনিমের চাদর বেছে নিতে পারেন যে কেউ। চাইলে পরতে পারেন পাঞ্জাবি বা সুতি শাড়ির মতো ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সঙ্গে কিংবা চলতি ধারার আধুনিক পোশাকের সঙ্গে। রেখাভিত্তিক ও জ্যামিতিক মোটিফ পাবেন লেজার ওয়ার্কের ডেনিমের চাদরে। জবরজং নকশা যাঁরা পছন্দ করেন না, তাঁরা এমন চাদর বেছে নিতে পারেন। দেশীয় নকশার দেখা মিলবে টাই-ডাই করা ডেনিম চাদরে। ‘ক্যাজুয়াল লুক’ আনতেও ডেনিমের চাদর দারুণ।

আধুনিকতায় ডেনিমের চাদর। চাদর: সারা লাইফস্টাইল

ভেলভেটের চাদর

ফ্যাশন হাউস মিথের ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপক মো. সাব্বির নেওয়াজ জানালেন ভেলভেট কাপড়ের চাদরের কথা। শীত আর বিয়ের মৌসুম ধরে একটু গাঢ় রঙের ভেলভেটের চাদর বেশ জনপ্রিয় এখন। সিকোয়েন্সের কাজ যেমন পাবেন, তেমনি পাবেন এমব্রয়ডারিও। সিকোয়েন্সের কাজ করা চাদরে থ্রি-ডি বা ত্রিমাত্রিক নকশার আবহ ফুটে ওঠে। বিয়ের অনুষ্ঠানে একটু কারুকাজ করা পোশাক পরার চল রয়েছে। কারুকার্যময় চাদর বেছে নিতে পারেন এমন অনুষ্ঠানে

প্যাচওয়ার্ক চাদরেও

প্যাচওয়ার্কের কাজ গত কয়েক বছরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্যাচওয়ার্ক থাকছে শীতের চাদরেও। খুঁতের ডিজাইনার ঊর্মিলা শুক্লা জানালেন, সুতি কাপড়ের চাদর এনেছেন তাঁরা। সুতি কাপড়ের এসব চাদর যেমন শাড়ি আর কামিজের সঙ্গে মানানসই, তেমনি জিনস আর টপের মতো আধুনিক পোশাকের সঙ্গেও পরতে পারবেন। টুকরা কাপড় জুড়ে জুড়ে (প্যাচওয়ার্ক) সেলাই দিয়ে কাঁথার মতো করেই তৈরি করা নীলাভ, সবুজাভ কিংবা খয়েরি চাদর আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানেও পরে যাওয়া যাবে অনায়াসে। এমন চাদরের পুরোটাতেই থাকছে প্যাচওয়ার্ক। ব্লকের কাজ করা চাদর নিত্যদিন অফিসের সময় বা নৈমিত্তিক ব্যবহারের জন্য বেশ।

প্যাচওয়ার্কের নকশায় সাজানো চাদর। চাদর: খুঁত