শ্যামল ছায়া

ছোট্টবেলার মায়ের বকুনিগুলো খুব মনে পড়ে। এটা করবে না, ওখানে যাবে না, যেটা-সেটা খাবে না, দুষ্ট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশবে না, শুধু পড়ো আর পড়ো। আহ...মাথাটা একেবারে খারাপ হয়ে যেত। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে যেত। বিশেষ করে সারাক্ষণ পড়তে বললে মাথার তাপমাত্রা সীমা অতিক্রম করত মাঝেমধ্যে। তখন কোনো কিছু ভাঙতে পারলেই যেন আমার স্বস্তি। তার ওপর এত বাধা, কোনো মানুষের পক্ষে কি এত বাধা মেনে চলা সম্ভব। মাঝেমধ্যে মনে হতো, সৎমায়েরাও বুঝি আমার মায়ের মতো এত শাসন জানেন না। একদিনের কথা বলি। আমাদের বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সাগরপার। আমার খেলার সাথিরা সবাই মিলে দলবেঁধে যাবে ঘুরতে সাগরপারে, সঙ্গেও আমিও বাদ পড়িনি। এখন মাকে রাজি করানোর পালা। মনি, মিশু, চৈতালী সবাই এল মাকে রাজি করাতে। কিন্তু কী হলো! মা উল্টো সবাইকে এমন ভয় দেখালেন যে ওরা কেউই আর কখনো সাগরে যাওয়ার নাম মুখে আনেনি। এই রাগী মাকে মিষ্টিও লাগত কখনো কখনো। কারণ, এই দুষ্টু মেয়েটাকে মা শোনাতেন রূপকথার গল্প। একসঙ্গে বসে লুডু খেলতে বসলে মা ইচ্ছা করে আমাকে জিতিয়ে দিতেন। মায়ের সেই দুষ্টু মেয়েটি এখন অনেক বড় হয়েছে, মাকে ছাড়া যে মেয়েটি এক রাতও কোথাও থাকেনি, সেই মেয়েটি একা চলার, একা থাকার সাহস রাখে। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা যে মা তাঁর মেয়েকে উপদেশবাণী শুনিয়ে মনে উৎসাহ জোগান, কোনো কাজকে তুচ্ছ না ভেবে সব কিছুতে অনুপ্রেরণা জোগান সে মেয়ে কি সাহস হারাতে পারে? খুব ইচ্ছা করে সাগরপারে নদীর ধারে গ্রামের ছোট্ট পথ ধরে মায়ের কাছে যেতে। কিন্তু বাবাটা খুব নিষ্ঠুর। বাড়ি যেতে বললে বলেন, ‘এখন না, পরীক্ষাটা দিয়ে ফেলো, ভালো করে পড়ায় মন বসাও, তোমাকে যেতে হবে না, তোমার মা আসবে কয়েক দিন পর।’

ফারহানা আকতার

চট্টগ্রাম কলেজ