সঙ্গীসাথি পশুপাখি

বাড়ির পোষা প্রাণীটির স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিন। পোষা কুকুর স্নিফারের সঙ্গে সুদীপ্ত। ছবি: সুমন ইউসুফ
বাড়ির পোষা প্রাণীটির স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিন। পোষা কুকুর স্নিফারের সঙ্গে সুদীপ্ত। ছবি: সুমন ইউসুফ

দিন শেষে বাড়িতে কেউ আপনার জন্য উন্মুখ অপেক্ষায় আছে। ঘরে ফিরলেই পোষা কুকুর বা বিড়ালটা ছুটে আসছে কাছে, পায়ের কাছে গা এলিয়ে দিচ্ছে বা ছুটে বেড়াচ্ছে ঘরময়। অথবা বাড়ির বাচ্চাদের নাম ধরে ডাকছে আদরের পোষা পাখিটা। এমন একটা সঙ্গী নিমেষেই আপনার মন ভালো করে দেবে নিশ্চয়ই।

বাড়িতে অনেকেই রাখতে চান পোষা প্রাণী। তবে কেউ কেউ হুট করে পোষা প্রাণী ঘরে নিয়ে এসে খাবার, থাকার জায়গা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন। এ প্রসঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতাল ঢাকার প্রধান ভেটেরিনারিয়ান এ বি এম শহীদুল্লাহ।

খাওয়াদাওয়া সমাচার
বিড়াল ও কুকুরের জন্য বিশেষ খাবার কিনতে পাওয়া যায়। তবে এগুলোর চেয়ে ঘরের স্বাভাবিক খাবারে বিড়াল বা কুকুরকে অভ্যস্ত করে তোলাটাই ভালো বলে মনে করেন এ বি এম শহীদুল্লাহ। আর বিশেষ এসব খাবার যদি কেউ খাওয়াতেই চান, সে ক্ষেত্রে    মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার যেন না কেনা হয় ওদের জন্য, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

ময়না বা টিয়া পুষলে শুকনো মরিচ এবং ছোলার ছাতু খাওয়াতে পারেন। পাখিরা সরিষা, সূর্যমুখীসহ নানা রকম বীজও বেশ পছন্দ করে। আর মাছের জন্য আলাদা করে খাবার কিনতে পাওয়া যায়। মাছকে দিনে দুবার খাবার দেওয়াই যথেষ্ট, আর সেই খাবারটুকুও দিতে হবে মাছের চাহিদা বুঝে। অতিরিক্ত খাবার দিলে অ্যাকুরিয়ামের পানি সহজেই ময়লা হয়ে যেতে পারে। কুকুর, বিড়াল বা খরগোশকেও অভ্যস্ত করে তুলুন ওদের স্বাভাবিক খাবারেই।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়

গোসল করাতে গেলে আপনার আদুরে পোষা প্রাণীটা একটু মন খারাপ করলেও ওকে কিন্তু মাঝেমধ্যে গোসল করিয়ে দিতে হবে। ওর জন্য বিশেষ শ্যাম্পুও কিনে নিতে পারেন। পাখিকেও গোসল করাতে হবে মাঝেমধ্যে।

বিড়ালের মল–মূত্র সারার জন্য বালুর ব্যবস্থা করুন। বালুর পাত্রটি বারান্দায় রাখুন। বারান্দায় কয়েকটি টবের সঙ্গে এক পাশে রাখতে পারেন ওর বালুর পাত্রটিকে। সপ্তাহে অন্তত একবার বদলে দিন বালু। পাখির জন্য অবশ্য বালুর ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নেই। তবে পাখির খাঁচার ট্রে পরিষ্কার করতে হবে নিয়মিত। মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করে দিন ওর পুরো খাঁচাটাই।

অ্যাকুরিয়ামের পানি বদলে দিন চার-পাঁচ দিন পরপরই। আর মাসে দুবার করে পুরো অ্যাকুরিয়ামটাই পরিষ্কার করে দিন। আর এ সময় মাছগুলোকে অবশ্যই অন্য কোথাও পানিতে রাখার ব্যবস্থা করুন।

মানানসই পরিবেশ

কুকুর-বিড়াল সাধারণত মানুষের গা ঘেঁষে থাকতে পছন্দ করে। তাই ওদের জন্য আলাদা পরিবেশ তৈরির তেমন কোনো ব্যাপার নেই। তবে খাঁচায় পাখি অবশ্যই রাখবেন বারান্দায়।

অ্যাকুরিয়ামে মাছ রাখার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অক্সিজেন, আলো আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

সুস্থ রাখতে

বিড়াল ও কুকুরকে অবশ্যই প্রতিবছর টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া তিন-চার মাস পর পর ওদের খাওয়াতে হবে কৃমিনাশক ওষুধও। এ ছাড়া আপনার পোষা প্রাণীর শরীরে কোনো ক্ষত থাকলে আগে সেটির চিকিৎসা করান, তারপর নিজের কাছে রাখুন। না হলে ওই ক্ষতের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন আপনি।

কারও কারও পশুর লোমে অ্যালার্জি থাকে, সে ক্ষেত্রে লোমশ প্রাণী ঘরে রাখা যাবে না। কারণ, এ ক্ষেত্রে পোষা প্রাণীর লোমের কারণে আপনার ত্বকে চুলকানি ও লালচে ভাব হতে পারে, এমনকি আপনার শ্বাসকষ্টও শুরু হয়ে যেতে পারে। লোমে কোনো ধরনের অ্যালার্জি না থাকলে আদরের কুকুর বা বিড়ালটা আপনার সঙ্গে ঘুমালেও সমস্যা নেই।

বেড়াতে যাওয়ার সময়

বিড়াল-কুকুর স্বাভাবিকভাবে এক-দুই ঘণ্টার ভ্রমণ সহ্য করতে পারে। তাদের সঙ্গে নিয়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ভ্রমণ করতে হলে যেতে হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে। তবে যেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেখানে গিয়ে আপনি তার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী থাকতে পারবেন কি না, তা ভেবে নিন আগেই। আর যেখানে যাচ্ছেন, সেখানকার মানুষ অথবা সেখানে থাকা অন্য প্রাণীরাও যে ওদের প্রতি বিরূপ আচরণ দেখাতে পারে, তা-ও খেয়াল রাখুন। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনি বাসায় ওদের দেখাশোনার জন্য একজন দায়িত্ববান ব্যক্তিকে রেখে যান। তাঁর কাছেই ওদের খাবারের ব্যবস্থাও করে রাখুন।

মাছগুলোকে দেখে রাখার জন্যও তেমনই একজনকে বাসায় রেখে যেতে হবে। তবে পাখি পুষলে সঙ্গে করেই নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

হঠাৎ অসুস্থতায়

আদরের প্রাণীটার হঠাৎ করে বমি বা ডায়রিয়া হলে মানুষের মতোই ওকে খাবার স্যালাইন দিতে পারেন। সমস্যা গুরুতর মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাখিদের যেকোনো ধরনের সমস্যায় পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন অতিসত্বর। মাছগুলোকে অসুস্থ মনে হলে যোগাযোগ করুন মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে।

গ্রন্থনা: রাফিয়া আলম