>

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
আমি একজন গৃহিণী। বয়স ৪০ পেরিয়েছে। আমি আমার কোনো কিছু গুছিয়ে রাখতে পারি না। রান্নাঘর, আলমিরা—কোনো কিছুই না। গোছাতে গেলে মাথা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। যখন পড়াশোনা করতাম, তখন নোট, পড়াশোনা—কিছুই ঠিকমতো গোছাতে পারতাম না। এ জন্য অল্পতেই মাথা গরম হয়ে যায়। কোনো কিছু ঠিকমতো খুঁজে পাই না। অস্থির লাগে। চেঁচামেচি করি।
বাসা থেকে কোনো কাজের জন্য সহজে বের হতে ইচ্ছে করে না। এমনও হয়েছে যে বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, তবু কোনো একটি কাজ করার জন্য বাসা থেকে বের হব হব করে আর বের হতে পারছি না। মনে হয়, কেউ আমাকে টেনে ধরছে। ফলে কাজ জমে যায়, তখন মাথায় চাপ তৈরি হয়। মনে হয় চিত্কার দিই। বদ্ধ জায়গায় প্রচণ্ড ভয় করে। মাঝেমধ্যে এসি রুমে রাতের ঘুম
ভেঙে যায়। রুম থেকে বের হয়ে যাই। মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাবে।
লিফটে, একা বাসায়, মাঝেমধ্যে মনে হয় পোশাকেও দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি খুব ভালো একটা বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি ‘সোশ্যাল ফোবিয়া’র কারণে। তাই প্রচণ্ড হতাশায় ভুগি। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম করি। কাউন্সেলিং করিয়েছি, তেমন সুফল পাইনি। অনেক কষ্ট করে বেঁচে আছি।
আমি ছোটবেলায় খুব বাজে পরিবেশের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। মা ডিভোর্সি ছিলেন। এ কারণে প্রায় হতাশ ও উদ্বিগ্ন থাকতাম। মাঝেমধ্যে মা আমাকে আঘাত করতেন।
এদিকে আমার স্বামী চরিত্রহীন। সঙ্গী হিসেবে আমার কোনো গুরুত্বই তার কাছে নেই। নামেই শুধু স্বামী-স্ত্রী। তার চারিত্রিক প্রভাব সন্তানদের ওপর পড়ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, বাচ্চাদের নিয়ে আত্মহত্যা করি। আর কোনো সহজ সমাধান খুঁজে পাই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা
পরামর্শ
তোমার দুশ্চিন্তা ও ভয়ের তীব্রতা এত বেশি হচ্ছে যে অনেক দিন ধরেই প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে রয়েছ। জীবনধারণ করতে গিয়ে আমাদের যে দৈনন্দিন কাজগুলো করতে হয়, সেগুলোর জন্য প্রচুর প্রাণশক্তির প্রয়োজন। তুমি এই কাজগুলো ঠিকমতো করতে গিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে করতে পারছ না। এ কারণে এতটা মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এ কারণে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে ফেলছ। হয়তো বা এই আচরণগুলো করার ফলে তোমার মধ্যে খুব হতাশা ও অপরাধবোধও সৃষ্টি হচ্ছে। মনের একটি দুষ্টচক্রের ভেতরে আবর্তিত হওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে বিষণ্নতা, নিজের প্রতি ও অন্যের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি হচ্ছে। এই মনোভাবটি প্রতিনিয়ত তোমার মধ্যে নেতিবাচক চিন্তাভাবনার উদ্রেক করছে। এ ছাড়া বাইরে যাওয়ার কথা মনে হলেও আবার দুশ্চিন্তা ও ভয় আপনাকে গ্রাস করছে। অন্যদিকে বাইরে যেতে না পারার কারণে তুমি যে ঘরের ভেতরে সব সময় নিশ্চিন্তে থাকবেন, সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বাড়ির ভেতরে আবদ্ধ থাকার বিষয়টিও তোমার জন্য আরামদায়ক হচ্ছে না।
স্বামীর কাছ থেকে ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা পেলে হয়তো তোমার কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো, কিন্তু সেটিও বাস্তব জীবনে অনুপস্থিত।
আমি বুঝতে পারছি না তুমি কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাউন্সেলর বা সাইকোলজিস্টের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছিলে কি না। খুব অল্প সময় কাউন্সেলিং গ্রহণ করলে ঠিক উপকার পাওয়া যায় না। কারণ কীভাবে তুমি নিজের প্রতি আস্থা অর্জন করে চিন্তাধারার মধ্যে যৌক্তিকতা নিয়ে আসবে, সেটি অভ্যাস করতে বেশ সময় লাগে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাউন্সেলরের সহায়তা নিয়ে আমরা ধীরে ধীরে, অনেক দিন ধরে তৈরি হওয়া মানসিক চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। এ ছাড়া শৈশবে যে কষ্ট, ভয় বা রাগের অনুভূতি হয়, সেগুলোর প্রভাবও কমানো যায়। তুমি কোনো ওষুধ সেবন করেছ কি না জানি না।
মনে হচ্ছে, কাউন্সেলিংয়ের সঙ্গে কোনো মনোরোগের চিকিত্সকের কাছে গিয়েও তোমাকে চিকিত্সা গ্রহণ করতে হবে। তুমি যে যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন করছ, সেটি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করছে। আশা করি, তুমি দ্রুত চিকিত্সা নিয়ে বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসবে।