সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য

প্রত্যেক বাবা-মা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করে যেতে চান। সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে। ভবিষ্যতে তাঁদের অবর্তমানে সন্তান যেন ভালোভাবে দিন কাটাতে পারে, সন্তানের সহায়-সম্পত্তি যেন সুরক্ষিত থাকে—এ নিয়ে মা-বাবার চিন্তারও যেন শেষ নেই। অনেককে বলতে দেখা যায় তাঁরা বেঁচে থাকা অবস্থায় সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চান। বিশেষ করে যাঁদের শুধু কন্যাসন্তান আছে। নিজেদের অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সন্তানেরাই যেন পায়, এটা নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যৎ কি আসলেই নিশ্চিত করা যায়? করলেও বা কতটুকু?

সম্পত্তির মালিকানা
বাবা-মায়ের নামে কোনো সম্পত্তি থাকলে তা জীবিত অবস্থায় এর মালিক বাবা-মা থাকবেন। সন্তানের ওপর কোনো অধিকার জন্মায় না কিংবা সন্তানেরা এর মালিকও নন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরই কেবল সন্তানেরা মালিক হবেন। অনেকেই চান বাবা-মা বেঁচে থাকা অবস্থায় সন্তানদের ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দিতে। যেন ভবিষ্যতে সম্পত্তি নিয়ে কোনো জটিলতা বা বিরোধ না দেখা দেয়। অনেকেই বলেন যে উইল করে যাবেন। কিন্তু মুসলিম আইনে চাইলেই পুরো সম্পত্তি উইল করা যায় না। মনে রাখতে হবে সন্তানদের উইল করে যেতে হলে পুরো সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না। এর বেশি উইল করলে অন্যান্য উত্তরাধিকারীর সম্মতি লাগবে। আর উইল কার্যকর হবে উইলকারীর মৃত্যুর পর। এ ক্ষেত্রে দান করে দেওয়া যেতে পারে তবে দান করলে সম্পত্তি বাবা-মা বেঁচে থাকা অবস্থায় দানের সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে। বাবা-মা আর সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান থাকলে তাকেও দান করে দেওয়া যাবে তবে সন্তানের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করে দিতে হবে।

শুধু কন্যাসন্তান থাকলে
যে কেউ তার একমাত্র বা একাধিক মেয়েকে জীবিত থাকাকালে অবস্থায় সম্পত্তি দান করে যেতে পারেন। তবে এ দান করতে হবে যথাযথ উপায়ে এবং দানের সব আইন শর্ত মেনে। দান করা সম্পত্তি মেয়ের দখলে দিয়ে দিতে হবে বা হস্তান্তর করে দিতে হবে। দানের লিখিত দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। তবে মেয়েকে সম্পত্তি দিয়ে দেওয়া মানে এ নয় যে, বাবা-মাকে সম্পত্তি ছেড়ে চলে যেতে হবে। বাবা-মা মেয়ের সঙ্গেই অবস্থান করতে পারবেন। আর মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলে যদিও মেয়ের নামে সম্পত্তি রয়েছে, তবু মেয়ের সম্পত্তিতে বাবা-মায়ের বসবাস করতে কোনো বাধা নেই।

টাকাপয়সা থাকলে
ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখার সময় অনেকেই সন্তানকে নমিনি করে থাকেন। অনেকে একাধিক সন্তানকেও নমিনি করে থাকেন। বাবা বা মা মারা গেলে সেই নমিনি এই টাকা উত্তোলন করতে পারে। এত দিন ধরা হতো, মৃত ব্যক্তির মনোনীত নমিনিই টাকার মালিক হবেন। কিন্তু গত ৩ এপ্রিল ২০১৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগ এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সঞ্চয়পত্রের অ্যাকাউন্টধারী মারা গেলে ওই অ্যাকাউন্টের টাকা নমিনির পরিবর্তে হিসাবধারীর উত্তরাধিকারী পাবেন বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তবে এ রায়ের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে আপিল বিভাগ থেকে। অনেক ব্যাংক নমিনি করা থাকলেও উত্তরাধিকার সনদ চান। আবার অনেক ব্যাংক নমিনিকে টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেন যদি নমিনির দেওয়া সব তথ্য সঠিক থাকে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট