
শিমুল ও তানিয়ার (ছদ্মনাম) চার বছরের সংসার। তাঁদের দুই বছর বয়সী ছোট্ট একটি মেয়ে আছে। এই দম্পতির নানা বিষয়ে মতের অমিল ছিল শুরু থেকেই। আজকাল বনিবনা হচ্ছে না কিছুতেই। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, এক ছাদের নিচে আর থাকা সম্ভব নয়। দুজনই বিচ্ছেদ চান। কিন্তু তাঁদের বিচ্ছেদের পর সন্তানের কী হবে? কার কাছে থাকবে? তাঁরা দুজনই মেয়েকে কাছে রাখতে চান।
শিমুল ও তানিয়ার মতো যেকোনো কারণেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। আবার স্বামী বা স্ত্রী আলাদা থাকতে পারেন। তাঁদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান থাকলে এ ক্ষেত্রে সন্তানদের আইনগত অবস্থান কী হবে, সন্তানেরা থাকবে কার কাছে, কে বহন করবে তাদের ভরণপোষণ, তা অনেকেই জানেন না। ফলে নতুন করে শুরু হয় সংকট। কিন্তু এ বিষয়ে আইন স্পষ্ট করে দিয়েছে।
মুসলিম আইন অনুযায়ী, বাবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আইনগত অভিভাবক আর মা হচ্ছেন সন্তানের তত্ত্বাবধায়ক। সন্তানের মা যদি বাবার কাছ থেকে আলাদা থাকেন কিংবা তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তাহলে মা তাঁর সন্তানের তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা হারাবেন না। ছেলের ক্ষেত্রে সাত বছর বয়স পর্যন্ত এবং মেয়েসন্তানের বয়ঃসন্ধি বয়স পর্যন্ত মা সন্তানদের নিজের কাছে রাখতে পারবেন। সন্তানের ভালোর জন্য যদি সন্তানকে মায়ের তত্ত্বাবধানে রাখার আরও প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে এ বয়সসীমার পরও মা সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে পারবেন। তবে এ জন্য ক্ষেত্রবিশেষে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। মা যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তাহলে সন্তানকে নিজের হেফাজতে রাখার ক্ষমতা হারাতে হতে পারে।
যদি আদালতে গড়ায়
বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে, এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নেওয়া যাবে। পারিবারিক আদালত তখন আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে, সন্তানেরা কার কাছে থাকবে। তবে আইনের পাশাপাশি আদালতের ক্ষমতা রয়েছে সন্তানের কল্যাণের দিকটি বিবেচনা করা। আদালত সন্তানের সুস্থ, স্বাভাবিক বিকাশের দিকটি বিবেচনা করে বাবা বা মা যে কারও কাছে রাখার আদেশ দিতে পারেন। অনেক সময় সন্তানের যদি ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা থাকে, তাহলে সন্তানের মতামতকেও আদালত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এ জন্য প্রয়োজন হলে সন্তানকে আলাদা করে বিচারক নিজের কাছে নিয়ে তার মতামত জেনে নিতে পারেন। আবার মা-বাবা পর্যায়ক্রমে সন্তানকে কাছে রাখা কিংবা একজনের কাছে থাকলে অন্যজনকে দেখা করার অনুমতিও দিয়ে থাকেন। পারিবারিক আদালতে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সন্তানকে কাছে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব কার
বিচ্ছেদের পর সন্তান যদি মায়ের কাছে থাকে, অনেক বাবা মনে করেন সন্তানের ভরণপোষণ দিতে হবে না। এটা ঠিক নয়। সন্তান বাবা কিংবা মা—যার কাছেই থাকুক না কেন, সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ বাবার। অর্থাৎ মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ হলে কিংবা মা-বাবা আলাদা বসবাস করলে বাবাকেই সন্তানদের ভরণপোষণ দিয়ে যেতে হবে। ইচ্ছে করলে মা আলাদা থেকেও বিবাহবিচ্ছেদ হোক বা না হোক, সন্তানের ভরণপোষণ আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট