সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল

ফেরদৌসী আফসানা
ফেরদৌসী আফসানা

বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর কথা খুব মনে পড়ত ফেরদৌসী আফসানার। বন্ধুদের বাবার কথা বলতেন। সেই গানটার দুটি লাইন তুলে দিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘বাবা, কত দিন দেখি না তোমায়...।’ বাবা মারা যাওয়ার ছয় মাসের মাথায় মেয়েটিও চলে গেল চিরতরে। আর আফসানাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে রবিনের বিরুদ্ধে।
দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নে বাড়ি ফেরদৌসী আফসানার। ২০১০ সালে রুহিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পরেই ঢাকায় চলে আসেন তিনি। শেরেবাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে ২০১৩ সালে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় সাইক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নামের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা সেনানিবাসের মানিকদী এলাকার একটি বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন তিনি। বাবা মারা যাওয়ায় আদরের মেয়েটার ওপর সংসারের অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে। পরিবার জানত আর কয়েকটা দিন। মা সৈয়দা ইয়াসমিন ভাবছিলেন, মেয়েটা পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছু করবেন। কিন্তু একটা ফোন যে সবকিছু এলোমেলো করে দিল। ১৩ আগস্ট রাতে মা জানলেন, আফসানা আর বেঁচে নেই।
আফসানার ভাই ফজলে রাব্বী বলেন, ‘একটা অজ্ঞাত ফোন থেকে মাকে ফোন করে জানানো হলো, আফসানা অসুস্থ, ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেলে ভর্তি। খবরটা শুনেই মা কান্নাকাটি শুরু করলেন। ঢাকায় থাকা মামা, চাচাসহ অন্য সব আত্মীয়কে ফোন করলাম। তাঁরা বাংলাদেশ মেডিকেলে গিয়ে খুঁজে পান না। ঠাকুরগাঁওয়ে আমরা সবাই অস্থির। এমন সময় আরেকটা ফোন থেকে বলা হলো, আফসানার লাশ রয়েছে মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে। মা যেন পাগল হয়ে গেলেন। আত্মীয়রা সবাই গেল আল-হেলাল হাসপাতালে। ওখানে জানা গেল, পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে গেছে। মর্গে মিলল আমার বোনের লাশ।’
ফজলে রাব্বীরা আফসানার বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছেন, শেরেবাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা হাবিবুরের সঙ্গে আফসানার পরিচয় হয়। এরপর তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। এর মাঝে তাঁদের সম্পর্কে টানাপোড়েনও চলে। কিছুদিন আগে বন্ধুরা তা মীমাংসা করে দেন। কয়েক দিন আগে আফসানা ও হাবিবুরের মধ্যে আবার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
রাব্বীর অভিযোগ, এসবের জের ধরে তাঁর বোনকে হত্যা করে থাকতে পারেন হাবিবুর। আফসানা নিহত হওয়ার পরদিন দিপু নামে হাবিবুরের এক বন্ধু তাঁকে ফোন করে ঘটনাটি মীমাংসা করে নিতে বলেন। এরপর হাবিবুরের চাচাতো ভাই পরিচয়ে এক যুবক তাঁকে বলেন, ‘একটা মিসটেক হয়ে গেছে। আসেন, আমরা বসে মীমাংসা করে ফেলি।’
ফজলে রাব্বী গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বোন আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে পরিবারের পক্ষ থেকে হাবিবুরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে।