সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে এবারও সম্মাননা পেলেন ইসমাইল

দুবাই প্রবাসী কক্সবাজারের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল
দুবাই প্রবাসী কক্সবাজারের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল

মোহাম্মদ ইসমাইল। জন্ম তাঁর টেকনাফে, থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে। দুবাই থেকে অর্জিত টাকা দেশে পাঠিয়ে তিনি গত বছর কক্সবাজার জেলার সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদানকারী হয়েছিলেন। আর এ বছরও শীর্ষস্থান তাঁরই দখলে।
জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থান কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, মালয়েশিয়া, লিবিয়া, ইরাকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য গেছেন জেলার ৬০ হাজার ৭৪৮ জন অভিবাসী। এঁদের মধ্যে নারী রয়েছেন ১ হাজার ১৪০ জন। অভিবাসীদের কমবেশি সবাই ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা পাঠান। তিন বছর ধরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদানকারী শীর্ষ তিনজন অভিবাসীকে সরকারিভাবে ক্রেস্ট ও সনদ দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। এবার ২০১৫ সালের সম্মাননার জন্য মনোনীত করা হয়েছে পাঁচজনকে। তাঁদের মধ্যে শীর্ষে আছেন মোহাম্মদ ইসমাইল।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রমিয়ন কান্তি পাল জানান, ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদানকারী হিসাবে আমরা পাঁচজনকে তালিকাভুক্ত করেছি। এঁদের মধ্যে শীর্ষে থাকা টেকনাফের মোহাম্মদ ইসমাইল দুবাই থেকে দেশে পাঠিয়েছেন ৩ কোটি ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯৩ লাখ ৩০ হাজার ৫১ টাকা পাঠিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন রামুর আবুল কায়সার। দুবাই থেকে ৭০ লাখ ৫০ হাজার ৭৩০ টাকা পাঠিয়ে তৃতীয় রেমিট্যান্স প্রদানকারী হয়েছেন টেকনাফের নীলা এলাকার মিজানুর রহমান, সৌদি আরব থেকে ৬৯ লাখ ৮৭ হাজার ৯০০ টাকা পাঠিয়ে চতুর্থ হয়েছেন টেকনাফের মোজাহিদুল হক এবং সৌদি আরব থেকে ৬০ লাখ টাকা পাঠিয়ে পঞ্চম রেমিট্যান্স প্রদানকারী হয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার মো. আবদুল হাকিম।
১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এই পাঁচজনকে সম্মাননা জানানো হবে। তাঁদের ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করবেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।
শ্রমিক থেকে শিল্পপতি: মোহাম্মদ ইসমাইলের জন্ম টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে। স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে তিনি থাকেন দুবাইতে। ছেলেমেয়েরা সেখানকার দেরা দুবাই বস পাবলিক স্কুলে পড়ালেখা করছে।
২০০৪ সালে মোহাম্মদ ইসমাইল সাধারণ একজন কর্মচারী হিসেবে দুবাই যান। এরপর কর্মচারী থেকে হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক। গত ১০ বছরে তিনি দুবাইতে গড়ে তুলেছেন ১২টি বোরকার দোকান। দুবাইয়ের বিখ্যাত আবাইয়া (বোরকা) মার্কেটে তাঁর এসব দোকান। দোকান থেকে আয় করা প্রায় ৩০ কোটি টাকা তিনি কক্সবাজারের পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া টেকনাফে মসজিদ ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থান কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে দ্বিতীয় হন ইসমাইল। এরপর গত দুই বছর ধরে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘প্রথম যখন দুবাইতে আসি তখন খুব কষ্টে দিন কাটিয়েছি। তবে লক্ষ্য ছিল কর্মচারী থেকে মালিক হব। কয়েক বছরের মাথায় সেই লক্ষ্য পূরণ হলেও আরও বড় হওয়ার ইচ্ছাশক্তি শেষ হয়ে যায়নি।’
মো. ইসমাইলের ১২টি বোরকার দোকানে ১৫৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি আছেন ৮০ জন।
ইসমাইল বলেন, প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা এলাকার গরিব ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, বিয়েশাদিসহ নানা সাহায্য সহযোগিতার জন্য খরচ করেন তিনি। এ ছাড়া টেকনাফে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইচ্ছাও আছে তাঁর।