সবচেয়ে বড় কোম্পানির সবচেয়ে কম বয়সী এমডির গল্প

বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা সম্ভাবনাময় তরুণদের নিয়ে প্রতি বৈশাখেই বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ‘ছুটির দিনে’। ১৪২৯ বঙ্গাব্দেও ক্রীড়া, অভিনয়, সংগীত, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, গবেষণা, অ্যাডভেঞ্চারে অগ্রগামী ৯ তরুণকে নিয়ে হাজির হয়েছে। এখানে পড়ুন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদের গল্প।

ওয়ালটনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। সেই ওয়ালটন এখন সবচেয়ে বড় তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানি। মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে ওয়ালটনের উত্থান যেমন বিস্ময়কর, কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর গল্পটাও তেমনি অসামান্য। হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ এখনো ৩৫ ছাড়াননি। অর্থাৎ তিনিই এখন দেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানির সবচেয়ে কম বয়সী এমডি।

ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ
ছবি: খালেদ সরকার

বেকার ছিলেন মাত্র ১৭ দিন

ওয়ালটন মূলত এস এম নজরুল ইসলাম ও তাঁর পাঁচ ছেলের স্বপ্নপূরণের গল্প। ব্যবস্থাপনায় এখন সেই কোম্পানিরই হাল ধরেছেন মাত্র ১২ বছর আগে যোগ দেওয়া গোলাম মুর্শেদ। পড়তেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) যান্ত্রিক প্রকৌশল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয় ২০১০ সালে। কনভোকেশন ছিল ৩ ডিসেম্বর আর ওয়ালটনে যোগ দেন ২০ ডিসেম্বর। গোলাম মুর্শেদ জানালেন, জীবনে বেকার ছিলেন কেবল সেই ১৭ দিন।

এয়ারকন্ডিশন বিভাগের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তবে এক জায়গায় বসে নির্দিষ্ট একটি কাজে মন বসত না। চলে এলেন উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং) প্ল্যান্টে। এখানে সারাক্ষণই কাজ চলে। কাজ করে আনন্দ পেলেন মুর্শেদ। তিন বছর পরে আসেন ফ্রিজ বিভাগে। তত দিনে তিনি নেতৃত্ব, বহুমুখী কাজের স্পৃহা ও দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। এরপরই তাঁকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাকৌশল বিভাগের প্রধান করে নিয়ে আসা হলো। এটাকেই তাঁর পেশাগত জীবনে টার্নিং পয়েন্ট মনে করেন মুর্শেদ। ২০১৯ সালে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর ২০২০ সালের ১০ আগস্ট হন দেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানির সবচেয়ে কম বয়সী এমডি।

গোলাম মুর্শেদ
ছবি: খালেদ সরকার

প্রশ্ন ছিল এত বড় দায়িত্ব, পালন করতে কেমন লাগছে। কথা হচ্ছিল ওয়ালটনের কার্যালয়ে বসেই। বললেন, ‘উপভোগই করছি। আবার দায়বদ্ধতার কথাটাও ভাবি। মনে হয় অনেক কিছুই করার আছে। আবার যা করছি, তা কতটা কাজে লাগছে সেটা নিয়েও ভাবতে হয়। কোম্পানির সঙ্গে জড়িত ৪০ হাজার পরিবার, তাদের প্রতিও দায়িত্ব আছে। সব মিলিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত কাজে লাগাচ্ছি কি না, সেটা নিয়েই ভাবি।’

খুব সকালেই ঘুম থেকে ওঠেন। অভ্যাসটা ছাত্রজীবন থেকেই রয়ে গেছে। উঠেই সবার আগে সেলফোনটা দেখেন। কারখানা খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। রাতে কিছু হলো কি না, কোনো বার্তা আছে কি না, সেসব দেখতে হয়। তারপর প্রস্তুত হয়ে ১০টা-সাড়ে ১০টার মধ্যে অফিসে চলে আসেন। জানালেন, ‘অফিসটা আমার পছন্দের একটা জায়গা। এখানে এসে একধরনের শান্তি পাই। কারখানায় গেলেও আমার খুব ভালো লাগে। আসলে কাজ করতেই আমার ভালো লাগে। মনে করি, কোনো কিছু করতে চাইলে কাজের জায়গাটিকে ভালো লাগাতে হবে।’

অফিস শেষে ব্যাডমিন্টন খেলতে যান আর সপ্তাহে এক দিন ফুটবল খেলেন।

স্বপ্ন যাবে বহুদূর

স্বপ্ন ওয়ালটনকে শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। শীর্ষ পাঁচের মধ্যে থাকারই ইচ্ছা। আরেকটি স্বপ্ন হচ্ছে একই ধরনের নামীদামি ব্র্যান্ড ও কোম্পানিকে কিনে একীভূত করা। বড় বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে কো-ব্র্যান্ডিংয়ে যাওয়ার ইচ্ছাও আছে। গোলাম মুর্শেদ এ নিয়ে বললেন, ‘ওয়ালটনকে আমি বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে চাই। বড় প্রতিটা দেশে আমরা যেতে চাই। মূলকথা হচ্ছে, দেশের বাজার দখল করার পরে বৈশ্বিক বাজারে ভূমিকা রাখাই আমার লক্ষ্য ও স্বপ্ন।’

আর তরুণদের জন্য তাঁর একটাই পরামর্শ; কাজ করে যেতে হবে। থাকতে হবে নিষ্ঠা ও ধৈর্য। এই বেশ ভালো আছি, এটা মোটেই ভালো ভাবনা নয়। তাহলে আর সামনে এগোনো যাবে না। এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে হবে।’

লেখক: হেড অব অনলাইন, প্রথম আলো