
মুণ্ডহীন একটি তিরবিদ্ধ শরীর। ‘ইনোসেন্ট বডি’ শিরোনামের ভাস্কর্যটি যেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ভীষ্মদেবের শরশয্যার প্রতিরূপ। ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ শিরোনামে আয়োজিত শিল্পী শারদ দাশের একক প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল এই ভাস্কর্য। বিস্তার আর্ট কমপ্লেক্সের পরম্পরা গ্যালারিতে ২৩ এপ্রিল শেষ হয় শরদের দশ দিনব্যাপী প্রদর্শনী।
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে প্লাইউডে করা ড্রয়িং, পোড়ামাটির টেরাকোটা, ভাস্কর্য ও ছাপচিত্রে করা ১৩টি শিল্পকর্ম। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামে ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার সোমনাথ হাওলাদার। অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শিল্পী ঢালী আল মামুন, বিস্তার আর্ট কমপ্লেক্সের পরিচালক আলম খোরশেদ।
প্রদর্শনীতে ঢোকার পর চোখে পড়ে একটি যুগল ভাস্কর্য। আধামানুষ-আধাঘোড়ার আদলে গড়া একটি অদ্ভুত জীবের পিঠে বসে থাকা মানবাকৃতির ফিগার। যে দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রেখেছে। শিল্পকর্মটির নাম ‘দ্য ট্রেইটর’।
স্মৃতিই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। শিল্পীর কাজে আমাদের চারপাশের ঘটে যাওয়া প্রতিনিয়ত ঘটনাপ্রবাহকে তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে নিজস্ব ঢঙে হাজির করেছেন এবারে প্রদর্শনীতে। তাঁর শিল্পকর্মগুলো লক্ষ করলে বোঝা যায়, প্রায় শিল্পকর্মগুলোতে তিনি প্রচলিত কম্পোজিশন ভেঙে ক্যানভাস থেকে ফিগারের মাথা, পা ও হাত বের করে দিয়েছেন। মোটা ব্রাশে কালো কালিতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে মানব ফিগার এঁকে তাতে জুড়ে দিয়েছেন পোড়ামাটিতে করা মুখমণ্ডল, হাত ও পায়ের টেরাকোটা। মোটা ব্রাশের ব্যবহার ছবির জমিনে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। আবেগের মাধুর্যের চেয়ে শৈলী ও নিরীক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। কিছু কিছু ছবিতে লাইনের বহুমাত্রিকতার ভিন্নতা বর্ণিল করেছে প্রদর্শনীর কাজগুলোকে। এ রকম শিল্প নির্মাণে শিল্পীর চিন্তার অভিনবত্ব প্রকাশ পেয়েছে তাঁর শিল্পভাষায়। শারদের সৃষ্ট চরিত্রগুলো স্থির, বিষণ্ন, হতাশ, ক্ষুদ্ধ কিংবা ভয়ার্ত। সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার অভিঘাত দেখা যায় তাঁর শিল্পকর্ম। বিস্তারে আয়োজিত এই প্রদর্শনীটি ছিল শারদের তৃতীয় একক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী।