সময়মতো কাজ করতে পারছেন না?

কাজে মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে বিরতি দিয়ে বই পড়তে পারেন। ছবি: অধুনা
কাজে মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে বিরতি দিয়ে বই পড়তে পারেন। ছবি: অধুনা

সময়মতো কাজ সেরে উঠতে না পারা অথবা কাজ দীর্ঘ সময় ধরে ফেলে রেখে করা যদি নিত্যকার অভ্যাস হয়, তাহলে ভাবার বিষয়। শুরুতে তেমন সমস্যা না হলেও ধীরে ধীরে এটি মারাত্মক সমস্যায় রূপান্তরিত হতে পারে। এটি আমাদের কর্মদক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসতে পারে শূন্যের কোঠায়।

বেশি সময় ফেলে রেখে কাজ শুরু করার ফলে কাজের প্রতি আগ্রহ কমে আসে। ফলে কাজের মান খারাপ হয়। আবার যে কাজটা ফেলে রাখা হয়েছে তা সারাক্ষণ মনের মধ্যে একপ্রকার অস্থিরতা তৈরি করে, যার ফলে অন্য কাজও সুন্দরভাবে করা যায় না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

কিছু কাজ কিংবা প্রতিযোগিতায় আবেদনের নির্ধারিত সময়সীমা বা ডেডলাইন দেওয়া থাকে। এসব কাজ ফেলে রাখতে রাখতে একপর্যায়ে কাজটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়। ফলে শেষ মুহূর্তে কাজটি আর না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কেউ। কেউবা আবার হাতে অনেক সময় আছে ভেবে দেরিতে শুরু করার ফলে শেষ পর্যন্ত আর কাজটি করতে পারে না। হয়তো শেষ মুহূর্তে জমাদানের কারণে তার কাজ নিম্নমানের হয়, সফল হতে পারে না।

অনেকে আবার ‘এবারই শেষ, এরপর থেকে সব কাজ ঠিক সময়ে করব’ এমনটি বারবার ভেবেও প্রতিবারই ঠিক সময়ে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে একপর্যায়ে ভয়াবহ হতাশা নেমে আসে এবং কোনো কাজই সঠিকভাবে করতে পারে না।

এসব সমস্যায় ভুগলে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসার জন্য নিজেকেই নিজের সাহায্য করা খুব জরুরি। পাশাপাশি একজন বন্ধু কিংবা কাউন্সিলরের সাহায্যও নেওয়া ভালো। এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক ও কাউন্সিলর অ্যানি বাড়ৈ।

তিনি বলেন, মানুষ যখন বিষণ্নতায় থাকে, তখন চাইলেও সে সব কাজ ঠিক সময়ে করতে পারে না। অর্থাৎ, হয়তো কাজটি মন থেকেই করতে চায় কিন্তু করে উঠতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে এটি এমন অভ্যাস হয়ে যায় যে সব কাজই শেষ মুহূর্তে করার জন্য ফেলে রাখে, সে ক্ষেত্রেও এটি রোগ বলেই ধরা হয়।

বিষণ্নতার সঙ্গে যেহেতু এটি সম্পৃক্ত, তাই এই সমস্যার সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ থাকে। যেমন ঘুম কম হওয়া কিংবা অধিক ঘুম হওয়া, উদ্বেগ ইত্যাদি। ঠিক কতখানি গুরুতর সমস্যা হলে কাউন্সিলরের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন, এর এমন কোনো সীমারেখা নেই। বারবার কেউ যদি কাজ করতে ব্যর্থ হয় এবং সেই হতাশা যদি তার অন্যান্য দৈনন্দিন কাজেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সে ক্ষেত্রে দ্রুত বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

সমস্যার শুরুতেই সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, এতে একজনের পক্ষে বুঝে উঠতে সুবিধা হয় যে তার সত্যিকারেই কাউন্সেলিং প্রয়োজন কি না। যদি সব কাজেই এই সমস্যা অনুভব করে, তাহলে তার কাউন্সেলিং প্রয়োজন কিন্তু যদি শুধু নির্দিষ্ট কিছু কাজের বেলায় এমন অনুভব হয়, তাহলে এটি কোনো সমস্যা নয়। তার বুঝে নিতে হবে সেসব কাজের প্রতি তার অনীহা রয়েছে এবং এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।

বেরিয়ে আসার উপায়

কাজগুলো নির্দিষ্ট করে লিখে ফেলা, যেন তা চোখের সামনে থাকে। এতে করে আমাদের মনে কাজটির ব্যাপারে একপ্রকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তৈরি হয়ে যায়।

‘টু ডু লিস্ট’ কিংবা প্রতিদিনের প্রতিটি বেলার কাজের তালিকা আগের রাতে লিখে রাখা। খেয়াল রাখতে হবে, যেন তালিকাটি বাস্তবনির্ভর হয়। এমন কোনো তালিকা করা যাবে না, যেখানে প্রচুর কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকবে কিন্তু আসলে সেগুলো করে ওঠা সম্ভব হবে না। এর ফলে আরও হতাশা বৃদ্ধি পাবে। যার পরিণাম আরও খারাপ হতে পারে।

একই সঙ্গে আগামী এক সপ্তাহের বা মাসের মধ্যে কিংবা এক বছরের মধ্যে কী কী অর্জন করতে চাই, তার একটি মনছবি আঁকতে হবে। এতে করে আমি কতটুকু সময়ের মধ্যে কী পরিমাণ কাজ আশা করছি এবং এ জন্য প্রতিদিন কতটা সময় দেওয়া প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।

এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি নিজে কিছু রিলাক্সেশন করা যেতে পারে। যেমন ব্যায়াম করা, ডায়েট করা, গান শোনা, গল্পের বই পড়া বা শখের কোনো কাজ করা ইত্যাদি। দিনে নির্দিষ্ট একটা সময়, ৩০ মিনিট একেবারেই কাজের চিন্তা না করে এসব কিছুতে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করা। কেননা, সারাক্ষণ কাজের কথা ভেবে কাজটাই করা না হলে সেখানে থেকেও হতাশার সৃষ্টি হয়।

বিষণ্নতা বা উদ্বেগের কারণ যদি কোনো মানসিক যন্ত্রণা বা অশান্তি হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে তা শেয়ার করেও তা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। এটি কাজে পুনরায় মনোযোগ দিতেও সহায়তা করবে।