সরগরম ব্যাডমিন্টন উৎসব

শীতের সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই খেলার মাঠগুলোতে জ্বলে উঠছে হলদেটে বাতি। অগ্রহায়ণের মৃদু হিমেল হাওয়ায় উঠতি বয়সী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সীরাও মাতছেন ব্যাডমিন্টন খেলায়। রাজধানীসহ পুরো দেশ সন্ধ্যার পর সরগরম হয়ে উঠছে ব্যাডমিন্টন উৎসবে।
রাজধানীর মিরপুর সরকারি ডি-টাইপ কলোনি। পুরো কলোনিতে ছোট-বড় মিলিয়ে খেলার মাঠ আছে চারটি। এবারের শীতে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য চার মাঠে কোর্ট কাটা হয়েছে ২০টি। কোনো কোর্টে জ্বলছে দুটি হ্যালোজেন বাতি, কোনোটায় কাঠের বোর্ডে লাগানো দুই শ ওয়াটের আট-দশটি হলদেটে বৈদ্যুতিক বাতি। শীতল বাতাস খেলায় যাতে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে, তাই কোর্টের চারপাশে টানানো হয়েছে পাটের তৈরি চট।
ব্যাডমিন্টনের কোর্ট কাটা হয় মূলত কয়েকজন বন্ধু, বড়জোর এলাকার ‘ভাই-ব্রাদার’ মিলেই। ফলে খেলাও হয় বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে। তাই তো কেউ ভালো ‘সার্ভ করলে’, ‘ম্যাশ করলে’ বাহবা কুড়োন প্রতিপক্ষেরও। এক এলাকার বন্ধুর দাওয়াতে অন্য এলাকার বন্ধুরাও আসছে খেলতে, আড্ডা দিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাবিদ চৌধুরী মণিপুর এলাকায় ব্যাডমিন্টন খেলতে এসেছেন। বললেন, ‘সারা দিন ক্লাস করে বন্ধুরা সবাই সন্ধ্যার পরই একসঙ্গে হওয়ার সময় পাই। স্কুলজীবন থেকে প্রতিবছর শীত এলেই কোর্ট কাটি। খেলার ফাঁকে আড্ডা দেওয়াটাও উদ্দেশ্য।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের প্রায় সব হলেই কাটা হয়েছে ব্যাডমিন্টন কোর্ট। হলের ভেতরের এসব কোর্টে খেলা চলেও তুলনামূলক বেশি রাত পর্যন্ত। ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী জহুরুল হক হলের রিয়াজুল ইসলাম জানান, তাঁর ব্যাডমিন্টন খেলার হাতেখড়ি হলে এসেই। তিনি বলেন, ‘শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার আলাদা একটা মজা আছে। সারা বছর এ সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকি। ক্লাস-পরীক্ষা যা-ই থাকুক, প্রতি রাতে কিছু সময়ের জন্য হলেও মাঠে আসি।’
মাঠের চারপাশ ঘিরে খেলা দেখতে উৎসুকেরা শুধুই দর্শনার্থী নন, খেলোয়াড়ও। কোর্ট থেকে যখন ‘থারটিন হোপ’, ‘ফোরটিন লাস্ট’ আওয়াজ আসে, তখন এসব দর্শনার্থীর মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, পরের খেলায় অংশ নিতে। র্যাকেটের দখল নেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণদের মাঝে হয়ে যায় খানিকটা বন্ধুত্বপূর্ণ মল্লযুদ্ধ!
রাজধানীর টোলারবাগ, সরকারি বিভিন্ন কলোনি, মণিপুর, মিরপুর ২ নম্বর ঘুরে দেখা যায়, ব্যাডমিন্টন কোর্টে নামার অপেক্ষার পাশাপাশি চলে খাওয়াদাওয়া। চা, চটপটি-ফুচকা, কখনো চানাচুর-মুড়ি মাখানো। আর খেলোয়াড়েরা কোনো উপলক্ষ পেলে কোর্টেই আয়োজন করে ফেলছেন চড়ুইভাতির। নিজেরাই রান্না করছেন খিচুড়ি-গরুর মাংস।
রাজধানীর বেশির ভাগ স্কুলেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। ফলে স্কুলপড়ুয়ারাও সন্ধ্যার পর র্যাকেট হাতে বেরিয়ে পড়ছে। অভিভাবকেরা মাঝেমধ্যে মাঠে গিয়ে হাজিরা দিচ্ছেন ছেলেরা কী করছে সেই খোঁজ নিতে।
সামনেই বিজয় দিবস আর নতুন বছরকে সামনে রেখে অনেক এলাকাতেই আয়োজন করা হচ্ছে প্রতিযোগিতার। কোথাও কোথাও প্রতিযোগিতা পেয়েছে বেশ নাম ‘বিজয় দিবস গোল্ডকাপ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট’।
দরদাম: ফেদার বা কর্ক মানভেদে ৩০ থেকে ৭০ টাকা, র্যাকেট তিন শ থেকে তিন হাজার টাকা, নেট পাঁচ শ থেকে হাজার টাকা, কোর্ট কাটার খরচ বাঁশসহ এক হাজার টাকা, বাতির দাম নির্ভর করে কতগুলো বাতি এবং কী ধরনের তার ওপরে। হ্যালোজেন বাতি প্রতিটি ৮০০ টাকা আর দু শ ওয়াটের পাঁচ বাতির বোর্ড বানাতে খরচ এক থেকে দেড় হাজার টাকা।