সিভিতে কী থাকা চাই

কাজে যোগ দেওয়ার প্রথম ধাপ হলো সিভি (কারিকুলাম ভিটা বা জীবনবৃত্তান্ত) তৈরি। নিয়োগদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মানানসই একটি সিভিতে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা চাই, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম।

সংগৃহীত

সাদামাটা ও মার্জিত

জীবনবৃত্তান্ত লেখার ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে সাধারণ কোনো ফন্ট। ক্যালিব্রি বডি, অ্যারিয়াল, টাইমস নিউ রোমান কিংবা যেকোনো ধরনের ফরমাল ফন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। টাইপোগ্রাফি কিংবা স্ক্রিপ্ট ফন্ট ব্যবহার না করা ভালো। তবে কোনো ক্ষেত্রেই জীবনবৃত্তান্তের আলাদা আলাদা অংশে ভিন্ন ধরনের ফন্ট ব্যবহার করা যাবে না। কোনো অংশের শিরোনাম কিংবা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছাড়া লেখা বোল্ড কিংবা ইটালিক করা চলবে না। জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করার ক্ষেত্রে কোনো উজ্জ্বল রং ব্যবহার না করে বরং হালকা রং ব্যবহার করতে হবে। সব মিলিয়ে রং ও ফন্ট মিলিয়ে জীবনবৃত্তান্তটি যেন খুব রংচঙে না হয়ে সাদামাটা ও মার্জিতভাবে চাকরিপ্রত্যাশী সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

গুছিয়ে বলুন আপনার লক্ষ্য

সিভির শুরুতে ‘ক্যারিয়ার অবজেকটিভ’ বা পেশাজীবনের লক্ষ্য লিখতে হয়। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় আমরা নিজেকে তুলে ধরার দিকেই বেশি মনোযোগী হই। কিন্তু এই অংশে মূলত আপনি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করছেন, তাদের কার্যক্রম, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কাজের পরিধি, এসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আপনার সম্পর্কে বলা উচিত। আপনি পেশাজীবনে কী করতে চান, তা নয়। বরং আপনি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে প্রতিষ্ঠানের জন্য কী অবদান রাখতে পারেন, সেটা লিখুন। নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিনয়ীভাবে লিখুন। তবে সেটা যেন কোনোভাবে মিথ্যা, অতিরঞ্জিত বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস প্রকাশ না করে।

সব প্রতিষ্ঠানে একই কথা নয়

আমরা অনেকেই একটি জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে সেটিই সব প্রতিষ্ঠানে পাঠানো শুরু করি। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান, পদ কিংবা কাজের গুরুত্ব হিসেবে জীবনবৃত্তান্তের কাঠামো, ভাষা এমনকি উপকরণও বদলে যায়। আবার অনেকেই জীবনবৃত্তান্ত হালনাগাদ করেন না। জীবনবৃত্তান্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়ার আগে চাকরির ধরন বুঝে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে। যুক্ত করতে হবে আপনার কর্মজীবন, অভিজ্ঞতা কিংবা পড়াশোনা সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্যগুলো।

কম কথায় বেশি বলুন

জীবনবৃত্তান্ত কত পৃষ্ঠার হবে—এই প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কত বেশি লিখছেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কী লিখছেন। যে পদের জন্য আবেদন করছেন, সেই পদের কথা মাথায় রেখে সিভি তৈরি করুন। যেন চাকরিদাতা আপনার ব্যাপারে আগ্রহী হন। ব্যক্তিগত তথ্যের ঘরে অপ্রয়োজনীয় তথ্য লিখবেন না। জটিল বাক্য, অপরিচিত ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ছোট ছোট বাক্যে সহজে আপনার সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন। বানান যেন ভুল না হয় সেদিকে নজর রাখুন। বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে ইংরেজি ব্যাকরণের ভুল এড়িয়ে চলুন।

ধারাবাহিকভাবে বলুন

জীবনবৃত্তান্তের কাঠামো বা ধারাবাহিকতা নিয়ে নানা রকম প্রচলন থাকলেও বর্তমানে বেশির ভাগ সময় নির্ধারিত একটি ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়। জীবনবৃত্তান্তের শুরুতেই ছবিসহ যোগাযোগের ঠিকানা, ফোন নম্বর ও ই–মেইল অ্যাড্রেস থাকবে। এরপর একে একে ‘ক্যারিয়ার অবজেকটিভ’, আগের কাজের অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা, কারিগরি দক্ষতা, কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ কিংবা কোনো প্রকল্পে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা এবং সবশেষে রেফারেন্সের উল্লেখ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে এমন কাউকে রেফারেন্সে উল্লেখ করা যাবে না, যার সঙ্গে আপনার পরিচয় নেই। জীবনবৃত্তান্তের সব অংশেই নির্ভরযোগ্য সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করুন।