সাঁতার কাটতে সুইমিংপুলে যাচ্ছেন, তা ভালো। কিন্তু সেখানকার পানিতে কতটুকু প্রস্রাব মিশে আছে, সেটা কি জানেন? বেশির ভাগ মানুষই এ ব্যাপারে অন্ধকারে থাকেন। কানাডার একদল গবেষক এই অদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দেশটির দুই শহরের ৩১টি সুইমিংপুল বা সাঁতারের কৃত্রিম স্থানের পানির নমুনা পরীক্ষা করেন। ফলাফল দেখে তাঁদের কপালে ভাঁজ পড়েছে।
ওই গবেষক দল বড় একটা সুইমিংপুলে ৭৫ লিটার প্রস্রাবের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন, আর ছোট একটা পুলে পেয়েছেন ৩০ লিটার। তাঁদের অনুমান, এমন বদভ্যাস বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষেরও অল্পবিস্তর আছে। আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ গবেষক লিন্ডসে ব্ল্যাকস্টক বলেন, সুইমিংপুলে মূত্রত্যাগের কথা সচরাচর কেউ স্বীকার করে না। তবে সাঁতারুদের মধ্যেই কেউ কাজটা করে থাকেন—এটা তো নিশ্চিত।
সুইমিংপুলের পানিতে মূত্র মেশানোর পরিণাম নিঃসন্দেহে খারাপ। কারণ, অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে মিশ্রিত প্রস্রাবের সংস্পর্শে মানুষের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা এবং চোখ জ্বালার মতো সমস্যা হতে পারে। গবেষকেরা মূলত অ্যাসালফেইম-কে নামের একটি রাসায়নিক উপাদান অনুসন্ধান করছিলেন। এটি একধরনের কৃত্রিম মিষ্টিকারক, যা সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয়তে মেশানো হয়। প্রস্রাবেই এটির চিহ্ন পাওয়া যায়। কারণ, অ্যাসালফেইম-কে হজম না হয়ে শরীর থেকে সরাসরি বর্জ্য হিসেবে বেরিয়ে যায়।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লেটার্স সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে ওই গবেষকেরা লিখেছেন, ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরিওতে ২০১৬ সালের অলিম্পিক আসরের সময় একাধিক সুইমিংপুলের পানির রং নীল থেকে সবুজে রূপান্তরিত হয়েছিল। তাই দেখে এ রকম জলাশয়ের পানির গুণমান পরীক্ষা-নিরীক্ষার তাগিদ শুরু হয়। প্রস্রাবে নাইট্রোজেনের বেশ কয়েকটি যৌগ থাকে, যেমন: ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ক্রিয়েটিনিন। এগুলো সুইমিংপুলের পানিতে বিদ্যমান ক্লোরিন ও অন্যান্য উপজাত পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে মানুষের চোখের প্রদাহ থেকে শুরু করে সাময়িক অ্যাজমার কারণ হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্ক ১৯ শতাংশ মানুষ এক জরিপে স্বীকার করেছেন, তাঁরা জীবনে একবার হলেও সুইমিংপুলে প্রস্রাব করেছেন। কানাডার আলবার্টা প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই গবেষণার বিষয়টি তাঁরা বিশদভাবে যাচাই করে দেখবেন। যেসব সুইমিংপুলের মান পর্যাপ্ততার সীমার নিচে, সেগুলো ঠিকঠাক করার লক্ষ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে।