
‘তোমায় গান শোনাব, তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ’। রবীন্দ্রনাথের এ গান দিয়ে শুরু করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। গানের ফাঁকে ফাঁকে রবীন্দ্রনাথের শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য নিয়ে চলল কথামালা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রধান হয়ে উঠল বন্যার সুরেলা কণ্ঠ। আক্ষরিক অর্থেই সুরের বন্যায় দর্শকদের ভাসালেন বন্যা।
ডেইলি স্টার ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরে ৩ ডিসেম্বর শুরু হয় তিন দিনব্যাপী জীবনের জয়গান উৎসব। তারই অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দর্শকদের মাতিয়ে গেলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও ব্যান্ড দল তিরন্দাজ। অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন আমন্ত্রিত অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। ডেইলি স্টারের শোবিজ সম্পাদক রাফি হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবরার এ আনোয়ার।
ডিসেম্বর মাস বলেই বুঝি বন্যার কণ্ঠে দেশের গান। ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানটি যেন নতুন আবেগ নিয়ে ধরা দিল দর্শক-শ্রোতাদের কাছে। এরপর রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্বের গানে দর্শকের সম্মোহিত হওয়ার পালা। বন্যা গাইলেন ‘দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে’। এরপর ‘তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে’ গানটি যেন একরাশ খোলা হওয়া এনে দিল মিলনায়তনে। সুরে আবিষ্ট দর্শক এরপর শুনলেন, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’ গানটি।
গানের ফাঁকে বন্যা বললেন, ‘চট্টগ্রামে আমি এর আগে অনেকবার এসেছি, এখানকার দর্শকদের কাছে যে ভালোবাসা পেয়েছি, তারই টানে এই অনুষ্ঠানে আসা।’ করতালিতে মিলনায়তন মুখর করে দর্শকেরাও এই অনুরাগের প্রতিদান দিলেন। কথামালার পরে আবার গান শুরু। বন্যা একে একে গাইলেন ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’। জমে গেল আসর। অনেক দর্শকই যেন স্মৃতিকাতর হয়ে উঠলেন। কয়েক দশক ধরেই তো এ দেশের শ্রোতারা বন্যার গানের সঙ্গে আছেন। অনেকটা তাঁর কল্যাণেই রবীন্দ্রনাথ শ্রোতাদের হৃদয়ে অনেক বড় জায়গা করে নিয়েছেন। স্মৃতিকাতর দর্শক-শ্রোতাদের মনটা কী পড়তে পেরেছিলেন বন্যাও? আর সে কারণেই কী শেষ করলেন ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ গানটি দিয়ে?
বন্যার পর কী শেষ আসরের? না, আনন্দযজ্ঞ চলেছিল আরও আধা ঘণ্টার মতো। জীবনের জয়গান করতেই িতরন্দাজ ব্যান্ডের শিল্পীরা এলেন মঞ্চে। গাইলেন ‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে/ পাগল আমার মন জেগে ওঠে।’ উচ্ছ্বাস–আনন্দের ফোয়ারা মিলনায়তনে। ব্যান্ডের শিল্পীদের সঙ্গে শেষে গলা মেলালেন দর্শকেরাও। জীবনের উদ্যাপন চলল পুরো দমেই।