সে–ও শুভ্র, আমিও শুভ্র

১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদের নবম প্রয়াণ দিবস। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখকের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হিমু, রুপা ও শুভ্র। অনেক তরুণ বইয়ের চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে খুঁজে ফেরেন। কিন্তু বাস্তবেই যাদের নাম হিমু, রুপা কিংবা শুভ্র, তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন? এখানে পড়ুন শুভ্র দে সরকারের অভিজ্ঞতা।

শুভ্র দে সরকার

হুমায়ূন আহমেদের শুভ্র সুদর্শন। আমিও সুদর্শন বলে অনেকের কাছে শুনেছি। বইয়ের শুভ্র ২৩ কি ২৪ বছর বয়সী যুবক। আমি যখন লেখাটি লিখছি, আমার বয়সও ২৩।

উপন্যাসে পড়েছি, সুদর্শন যুবকের সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে তার চোখ। কিন্তু শুভ্রর চোখে সমস্যা ছিল। সে চশমা ছাড়া কিছুই দেখত না। চশমা ছাড়া তার দুনিয়া প্রায় অন্ধকার। আমার সঙ্গে এখানে শুভ্রর কোনো মিল নেই। আমি চশমা ছাড়া অনেক ভালো দেখি এবং অনেকের কথামতো আমার চোখ আর কান একটু বেশিই সতর্ক!

উপন্যাসে আছে, শুভ্রর বাসায় কোনো বন্ধু আসত না, তার তেমন বন্ধু ছিল না, সে বাইরেও যেত না। যেমন তার এক কাছের বন্ধু জহিরের বিয়েতে সে যেতে পারেনি, কারণ তার মা-বাবা চাননি সে যাক। সে যেন যেতে না পারে, সে জন্য তার চশমা লুকিয়ে রাখা হয়।

কিন্তু আমার কথা যদি বলি, পুরোটাই উল্টো। মাস চারেক আগেও আমি আমার এক বন্ধুর বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছি। আমি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সমাজ ও দেশের জন্য যেন কিছু করতে পারি, সেটা আমি, আমার মা–বাবা ভীষণ পছন্দ করেন। সব সময় তাঁরা আমাকে উৎসাহ জোগান।

আমি ঘুরতে পছন্দ করি। সময় পেলেই ঘুরতে বের হই। কোথায় যেন পড়েছি, দুভাবে জ্ঞান অর্জন করা যায়—বই পড়ে আর ভ্রমণ করে। এখানে উপন্যাসের শুভ্রর সঙ্গেও আমার বেশ অমিল। শুভ্র বই পড়তে পছন্দ করত, আমি বই পড়ার চাইতে ঘোরাঘুরি বেশি পছন্দ করি।

হুমায়ূন আহমেদের লেখায় পড়েছি, দারুচিনি দ্বীপে সবাই ঘুরতে যাবে, কিন্তু শুভ্রকে বন্ধুরা নিতে চায় না। নেহাত চক্ষুলজ্জার জন্য তাকে ভ্রমণের কথা বলা হয়। তার বন্ধুরা ভাবত, সে গিয়ে যদি চশমা হারিয়ে ফেলে তাহলে তাকে নিয়ে বিপদে পড়তে হবে। শুভ্রকে উপন্যাসে একটু খামখেয়ালি চরিত্রে দেখানো হয়েছে, বাসায় বসে বসে সে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড করত। আর আমার এই বিধিনিষেধেও ঘরে থাকতে কষ্ট হয়। ভাবি, কখন বাইরে যাব, টংদোকানে এক কাপ চা হাতে হাসতে হাসতে কিছু একটা নিয়ে পরিকল্পনা করব।

মানুষ গল্প–উপন্যাস পড়ে তার নিজের জীবনের সঙ্গে মেলাতে চায়, তার বাস্তব জীবনকে খোঁজার চেষ্টা করে। আমি শুভ্রর মধ্যে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মিলের চাইতে অমিলটা পেয়েছি বেশি। তবু উপন্যাসের শুভ্রকে আমার ভালো লাগে।

লেখক: শিক্ষার্থী, টাঙ্গাইল