
ঈদের বাজার এখন সরগরম। রাজধানীর পাড়া-মহল্লার দোকানপাট থেকে শুরু করে অভিজাত বিপিণবিতান—সর্বত্র ক্রেতাসমাগম বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো। চাকরিজীবী প্রায় সবাই ঈদের উৎসব ভাতা পেয়ে গেছেন। এদিকে ঈদের দিনটিও এগিয়ে আসছে দ্রুতই। কাজেই কেনাকাটার পর্ব চুকিয়ে ফেলতে এখন তাঁরা ব্যতিব্যস্ত। দম ফেলার ফুরসত নেই বিক্রেতাদেরও।
ঈদুল ফিতরে কেনাকাটার তালিকার সিংহভাগজুড়ে থাকে পোশাক-পরিচ্ছদ। পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে প্রধান পছন্দ পাঞ্জাবি। ফলে বছরের সবচেয়ে বেশি পাঞ্জাবি বিক্রি হয় এই সময়। দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতিবছরই ঈদ উপলক্ষে পাঞ্জাবিতে বস্ত্র, রং, নকশায় নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে থাকে। গত কয়েক বছর বেশ জনপ্রিয় ছিল খাটো ঝুলের পাঞ্জাবি। নজরকাড়া উজ্জ্বল রঙের সুতি চেক ও ডোরাকাটা কাপড়ের খাটো পাঞ্জাবির প্রতি মূলত আগ্রহী ছিলেন তরুণ প্রজন্মের ক্রেতারা।
এ বছর ঈদের বাজারে আবার লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি ফিরে এসেছে তার স্বমহিমায়। গরমের সময় ঈদ হচ্ছে বলে সিল্ক, অ্যান্ডি, ধুপিয়ান, তসর—এসবের চেয়ে সুতি এবং সাদা রঙের পাঞ্জাবির চাহিদা একটু বেশি বলে জানালেন বিক্রেতারা। ঈদে আড়ংয়ের পাঞ্জাবির বরাবরই আলাদা কদর আছে ক্রেতাদের কাছে। বিপুল বৈচিত্র্যময় পাঞ্জাবি রয়েছে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে। মগবাজার কেন্দ্রের বিক্রয় প্রতিনিধি রাজীব আহসান জানালেন, তাঁদের সুতির পাঞ্জাবির দাম এক হাজার ২০০ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। সিল্ক, অ্যান্ডি—এসব পাঞ্জাবির দাম এক হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া এখানে শেরওয়ানি মিলছে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সাদা জয়শ্রী, আদ্দি, অ্যান্ডি, অরবিন্দসহ বিভিন্ন সুতি কাপড়ের ওপর সাদা সুতার সূক্ষ্ম কারুকাজের পাঞ্জাবি রয়েছে লুবনানে। বেইলি রোড শাখার বিক্রয় প্রতিনিধি ইমরান জানালেন, এসব পাঞ্জাবির দাম শুরু দুই হাজার ৮৫০ টাকা থেকে চার হাজার ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। সিল্ক পাঞ্জাবিতে রয়েছে ইয়ক, পুতি, এমব্রয়ডারির কাজ। দাম দুই হাজার ৮৯০ থেকে পাঁচ হাজার ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া বিশেষ ধরনের ডিজাইনের পাঞ্জাবি আছে তাঁদের, সাড়ে চার হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা দামের। এর সঙ্গে চুড়িদার পায়জামা ৭৫০ টাকা, আলিগড় ৫৯০ টাকা ও সোজাকাট ৬৫০ টাকা।
ইদানীং ইয়োলোর পাঞ্জাবি তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এদের পাঞ্জাবিতে নকশার তেমন জাঁকজমক নেই। এক রঙের এবং ডোরাকাটা সুতির লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবির দাম এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা। দেিশ ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে কে-ক্রাফট, অঞ্জনস, দেশাল, অন্যমেলার বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেল সুতির পাঞ্জাবির দাম ৭৫০ থেকে দুই হাজার, সিল্ক ৯৫০ থেকে সাত হাজার, ধুপিয়ান চার হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঢাকায় পাঞ্জাবির সবচেয়ে বড় মার্কেট মালিবাগের আয়েশা কমপ্লেক্স সুপার মার্কেট। এখানে বিক্রেতারা জানালেন, এবার পাঞ্জাবির দাম গতবারের চেয়ে একটু বাড়তি। বছর খানেক ব্যবহার করা যাবে এ ধরনের সুতি পাঞ্জাবির সর্বনিম্ন দাম ৪০০ টাকা। গত বছর এ ধরনের পাঞ্জাবি ৩০০ টাকায় পাওয়া গেছে। এই মার্কেটের পাঞ্জাবি প্রস্তুতকারক শেকড়ের ব্যবসায়ী উম্মান চৌধুরী, সজিব স্টোরের নাজমুল হুদা জানালেন, মোটামুটি মানের সাদা আদ্দির পাঞ্জাবির দাম ৬০০ টাকা। হাজার-বার শ টাকায় ভালো পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে। সুতির পাঞ্জাবিই বেশি চলছে। তবে দর চড়া বলে বিক্রিও গতবারের চেয়ে খানিকটা কম। এখানেই কথা হলো খিলগাঁও থেকে সপরিবারে কেনাকাটা করতে আসা ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে। গলায় ও হাতে বুটিদার আদ্দির পাঞ্জাবি কিনেছেন এক হাজার ২০০ টাকায়। তিনি মন্তব্য করলেন, ‘এক হাজার টাকায় কিনতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কী আর করা যাবে। সব জিনিসেরই দাম বেশি। এরারই বা কমে বিক্রি করবে কেন?’
কেনাকাটা করতে এসে এভাবেই কিছু কিছু বাড়তি খরচ হয়ে যাচ্ছে অনেকেরই। মিলছে না বাজেটের সঙ্গে। সাধ আর সাধ্যের এই টানাটানি মধ্যবিত্ত জীবনে নতুন কিছু নয়। এর ভেতর দিয়েই পেরিয়ে যায় তাদের সংকটের সময়, উৎসবের দিন।