স্বামীর থেকে আলাদা থাকছেন?

তালাক কার্যকর না হলেও একজন স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে আলাদা থাকতে পারেন। ছবিটি প্রতীকী। মডেল: রাজন ও তুর্যী। ছবি: অধুনা
তালাক কার্যকর না হলেও একজন স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে আলাদা থাকতে পারেন। ছবিটি প্রতীকী। মডেল: রাজন ও তুর্যী। ছবি: অধুনা

যেকোনো কারণেই হোক না কেন স্ত্রী আলাদা থাকতে চাইছেন। হয়তো বনিবনা হচ্ছে না, সংসারে মানিয়ে নিতে পারছেন না। চাকরি কিংবা সন্তানদের জন্যই হোক আলাদা থাকার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। আলাদা থাকা মানে এ নয় যে তাঁকে তালাক কার্যকর করতে হবে। তালাক কার্যকর না হলেও একজন স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে আলাদা থাকতে পারেন। তবে এ জন্য উপযুক্ত কোনো কারণ থাকতে হবে। স্বামী যদি মনে করেন যে স্ত্রী আলাদা থাকলে তাঁকে তালাক প্রদান করবেন সেই অধিকার স্বামীরও আছে। তাই আলাদা থাকতে হলে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তা করা উচিত। তবে স্ত্রী আলাদা থাকলেও স্ত্রীর কিছু আইনগত প্রাপ্য রয়েছে, যা তাঁকে দিতে হবে। আমাদের দেশে হিন্দু স্ত্রীরা তালাক নিতে পারেন না। তাঁরা আইন অনুযায়ী পৃথক বসবাস করতে পারেন।

রয়েছে খোরপোশের অধিকার

স্ত্রী আলাদা থাকলেও তাঁকে ভরণপোষণ দিতে হবে। স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে অস্বীকার করার যেসব যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে তা হলো: ১. তাৎক্ষণিক বা আশু দেনমোহর পরিশোধ না করলে ২. স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে ৩. স্বামী যদি খারাপ ব্যবহার করে ৪. অনেক দিন ধরে স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামী দূরে থাকলে ৫. সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে এবং ৬. অন্য কোনো আইনসংগত কারণে। এসব কারণে স্ত্রী আলাদা থাকলেও স্ত্রী ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী।

যদি তালাক হয় তাহলে তালাকের নোটিশ পাঠানোর পর ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ দিতে হবে। আইনসম্মত স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণপোষণ না দেন, তাহলে পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাওয়া যায়। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ অধিকার রয়েছে। এমনকি হিন্দুধর্মাবলম্বীরাও এ আইনের বলে ভরণপোষণের জন্য মামলা করতে পারেন পারিবারিক আদালতে। মুসলিম স্ত্রী খোরপোশ দাবি করে স্বামীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন পাওয়ার পর চেয়ারম্যান স্ত্রী ও স্বামী উভয় পক্ষের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। সালিসি পরিষদ স্ত্রীর দাবির যৌক্তিকতা যাচাই করে খোরপোশের পরিমাণ নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত দেবেন এবং সে মোতাবেক একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন। কোনো পক্ষের প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে সালিসি পরিষদ কর্তৃক দেওয়া আদেশ বেআইনি বা বাতিলযোগ্য। এ আদেশের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বা প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সহকারী জজ আদালতে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে এবং সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে।

সন্তানকে কাছে রাখার অধিকার

একজন স্ত্রী আলাদা থাকলে তাঁর নাবালক সন্তানদের কাছে রাখার অধিকার রয়েছে। সাধারণত ছেলেসন্তান সাত বছর পর্যন্ত এবং মেয়েসন্তান বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত তাদের মায়ের হেফাজতে থাকতে পারে। অবশ্য সন্তানেরা কার কাছে থাকবে, এ বিষয়ে কোনো বিরোধ পারিবারিক আদালতে উত্থাপিত হলে সন্তানদের মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে আদালত যেকোনো আদেশ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে উল্লিখিত বয়স পার হলেও মায়ের হেফাজতে থাকার আদেশ আদালত দিতে পারেন। সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণও বাবাকে বহন করতে হবে। তবে স্ত্রী আলাদা বসবাস করলেও তালাক কার্যকর না করা পর্যন্ত অন্য কোথাও বিয়ে করতে পারবেন না। আবার অন্য কোথাও বিয়ে করলে সন্তানদের হেফাজতে রাখার অধিকার হারাতে হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে বিনা কারণে স্ত্রী আলাদা বসবাস করে কোনো স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা কোনো অভিযোগ উত্থাপন করলে বা মামলা-মোকদ্দমা করলে স্ত্রীকে এর খেসারতও দিতে হবে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট