মা বেঁচে নেই। জীবনের প্রয়োজনের তাগিদেই বাবা আবার বিয়ে করলেন। ঘরে বাবার স্ত্রী এলেন, যাঁকে সাধারণত সৎমা বলা হয়। সৎমায়ের ঘরে সন্তানও জন্মাল। সৎমায়ের সন্তানদের সৎভাই বা বোন হিসেবেই বলা হয়। এই সৎমা বা ভাইবোনদের কি কোনো আইনি অধিকার থাকে? তাঁদের মর্যাদাই বা কী হয়? অনেক সময় আপন মা বেঁচে থাকা অবস্থায় বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান কী? আবার দেখা যায় বাবা বেঁচে নেই কিন্তু মা আবার বিয়ে করেছেন। আপনি বড় হয়ে বুঝতে পারলেন যাঁকে এত দিন বাবা হিসেবে ডেকেছেন, তিনি আসলে আপনার আসল বাবা নন। সৎবাবা। আইন এই ‘সৎ’ সম্পর্কের অবস্থান কীভাবে নির্ধারণ করেছে—আসুন, জেনে নিই।
কী বলে আইন
বাবা যদি আবার বিয়ে করেন আপন মায়ের বর্তমানে বা অবর্তমানে, তখন সৎমা কিন্তু আইনত বাবার স্ত্রীর মর্যাদা পাবেন। আপন মা যেসব অধিকার ভোগ করতেন বা করছেন, সে ক্ষেত্রে সৎমা-ও সেই অধিকার ভোগ করবেন। সৎমা তাঁর স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর ও ভরণপোষণ পাওয়ার হকদার। এমনকি তিনি তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ ও দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতেও যেতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, সৎভাই বা বোন থাকলে তাঁরাও বাবার সন্তান। তাঁদেরও সমান অধিকার রয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি এবং টাকাপয়সার ক্ষেত্রে তাঁরাও ওয়ারিশ হিসেবে অংশ পাবেন।
সৎমা বাবার অবর্তমানে বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তি পাবেন। মুসলিম আইন অনুযায়ী উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তির বণ্টন হবে। কোনোভাবেই তাঁদের বঞ্চিত করা যাবে না। যদি সৎমা বা ভাইবোনদের বঞ্চিত করা হয়, তাহলে তাঁরা আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। বিশেষ করে বণ্টনের মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন দেওয়ানি আদালতে। এমন যদি হয় মা বেঁচে থাকা অবস্থায় বাবা ঘরে সৎমা নিয়ে এলেন, তখন যদি বাবা আগের স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বিয়ের অভিযোগে মামলা করতে পারবেন প্রথম স্ত্রী। তবে দ্বিতীয় বিয়েটি কিন্তু অবৈধ হয়ে যাবে না। বাবা দ্বিতীয় স্ত্রীকে যদি আগের স্ত্রীর কথা না জানিয়ে বিয়ে করেন, তাহলে দ্বিতীয় স্ত্রীও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করতে পারেন।
যদি এমন হয় যে বাবা বেঁচে নেই বলে মা অন্য কোথাও বিয়ে করলেন, তখন সৎবাবার স্ত্রী হিসেবে আপনার মা কিন্তু প্রাপ্য অধিকার চাইতে পারবেন। এমনকি সৎবাবার মৃত্যুর পর আপনার মা সম্পত্তির ভাগও পাবেন।
সৎবাবা বা মায়ের সম্পত্তির অংশ
মুসলিম আইনে সৎবাবা বা মায়ের নামে কোনো সম্পত্তি থাকলে তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁর আপন সন্তানেরাই শুধু সম্পত্তির ভাগ পাবেন। কোনো সৎছেলে বা মেয়ে সৎবাবা বা মায়ের সম্পত্তি পাবেন না। তেমন করে কোনো সৎছেলে বা মেয়ের সম্পত্তির ভাগীদারও সৎবাবা বা মা হবেন না। আসল কথা হচ্ছে, সম্পত্তির অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে আপন সন্তান কিংবা আপন বাবা-মা হতে হবে। তবে সৎভাই ও বোন কিছু ক্ষেত্রে মুসলিম আইন অনুযায়ী অন্য সৎভাই বা বোনের সম্পত্তির ভাগ পান।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট