
সাধারণত রাস্তাঘাটে হাঁটাচলা করার সময় হোঁচট খেলে পায়ের গোড়ালি মচকে যায়। তবে শুধু পা নয়, মচকাতে পারে হাত থেকে শুরু করে শরীরের যেকোনো স্থানের জয়েন্টই। গর্তে পড়ে গিয়ে, রিকশা বা বাস থেকে নামতে গিয়ে, সিঁড়ি থেকে নামার সময় ধাপে ঠিকমতো পা না পড়লে, খেলাধুলার সময়, জুতার সমস্যার কারণে, এমনকি বিছানা থেকে উঠতে গিয়েও গোড়ালি মচকাতে পারে। বিশেষ করে যাদের উঁচু হিলের জুতা পরার অভ্যাস আছে, তাদের পা মচকানোর আশঙ্কা বেশি।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শামীমুজ্জামান বলেন, আমাদের শরীরের প্রতিটি জয়েন্টের চারপাশে থাকে লিগামেন্ট। এগুলো জয়েন্টকে শক্ত করে ধরে রাখে। একটা নির্দিষ্ট কোণ পর্যন্ত নড়াচড়া করা যায় সহজেই কিন্তু এর বেশি করতে গেলে ব্যথা লাগে। কোনো কারণে সীমার বাইরে নড়াচড়া হলে লিগামেন্টে টান পড়ে বা কিছু অংশ ছিঁড়ে যায়। এটাকেই মচকে যাওয়া বলে।
তবে পা যেহেতু পুরো শরীরের ওজন বহন করে, তাই পায়েই মোচড়টা একটু বেশি লাগে। আর হঠাৎ পা মচকে যাওয়া সমস্যায় অনেককেই ভুগতে হয়। অসহ্য যন্ত্রণা, ফোলার চোটে পা ফেলাই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় তখন। এ সময় ঠিকমতো যত্ন না নিলে এই ব্যথাই ভোগায় বহু দিন।
কী করবেন? বিশ্রাম নিতে হবে
পা ফুলে গেলে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশ্রাম। যন্ত্রণা কমে গেলেও বিশ্রাম না নিয়ে হাঁটাহাঁটি, খাটাখাটুনি করলে গোড়ালির ফোলা থেকেই যাবে। তাই এ সময় অন্তত দুই থেকে তিন দিন বিশ্রাম নিন। ইদানীং ৭ থেকে ১০ দিনের বেশি বিশ্রাম দেওয়া হয় না। বরং সাপোর্ট নিয়ে শিগগিরই হাঁটাচলা শুরু করতে বলা হয়।
বরফ কীভাবে দেবেন?
পায়ের ফোলা ভাব কমাতে সবচেয়ে উপকারী বরফ। সরাসরি বরফ দেবেন না, একটা পরিষ্কার কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে সেটা দিয়ে সেঁক দেওয়াটা সঠিক উপায়। চোট পাওয়ার প্রথম ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা বা ফোলা না কমা পর্যন্ত প্রতি এক-দুই ঘণ্টা অন্তর ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে আইস প্যাক লাগান। এতে ফোলা ভাব অনেকাংশে কমে যাবে।
ক্রেপ বা ব্রেস
গোড়ালির ফোলা ভাব কমাতে যেমন সাহায্য করবে আইস প্যাক, তেমনই যন্ত্রণা উপশমে কাজে আসবে ক্রেপ বা ব্রেস। চোট পাওয়ার প্রথম ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা অবশ্যই ব্রেস লাগিয়ে রাখুন। এতে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে অতিরিক্ত টাইট করে ব্রেস লাগাবেন না।
পা ওপরে তুলে রাখুন
পা যত নামিয়ে বা নিচে ঝুলিয়ে রাখবেন, তত ফোলা বাড়বে। তাই দিনে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পা ওপরে তুলে রাখুন। শোয়ার সময় হার্ট লেভেলের থেকে পা উঁচুতে রাখবেন। এতে খুব দ্রুত ফোলা ভাব কমে আসবে।
কখন চিকিৎসা জরুরি?
পা মচকানোর তিন ধরনের ঘটনা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতার ভিন্নতা রয়েছে। মৃদু পা মচকানো মানে হলো কেবল জয়েন্টের চারপাশের লিগামেন্ট স্ট্রেচ হওয়া বা টান লাগা; এ জন্য তেমন কোনো চিকিৎসারও দরকার নেই। মাঝারি তীব্রতার মানে হলো লিগামেন্ট খানিকটা ছিঁড়েও গেছে এবং গোড়ালির সন্ধিও গেছে মচকে। আর তীব্র মাত্রার মানে হলো লিগামেন্ট সম্পূর্ণই ছিঁড়ে যাওয়ার সঙ্গে গোড়ালির সন্ধি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। পরের দুটির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা জরুরি।
সতর্কতা
বারবার একই জায়গায় পা মচকানো, যা পরে ওই সন্ধিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়জনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই খেলাধুলা ও দ্রুত হাঁটাচলার সময় সাবধানে থাকুন, পায়ের পাতার ভারসাম্য বজায় থাকে এমন জুতা পরুন, সিঁড়ি ভাঙার সময় সাবধান হোন।
লেখক: চিকিৎসক