হতাশা কাটাতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরু, এখন লাখ টাকা আয় রিয়াজুলের

করোনাকালের দীর্ঘ বন্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার রুটিন সব ওলট–পালট হয়ে গেছে। পড়ালেখা শেষ করে যাঁরা দ্রুত পেশাজীবনে পা রাখার কথা ভাবছিলেন, সেশনজটের দুর্ভাবনা নিশ্চয়ই তাঁদের ভোগাচ্ছে। তবে এই দুর্যোগেও হাল ছাড়েননি অনেক তরুণ। পড়ালেখার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি সেরে রাখছেন তাঁরা।

রিয়াজুল মাসুদ
ছবি: সংগৃহীত

এসএসসি পরীক্ষার ফল হাতে পেয়ে মন খারাপ হয়েছিল রিয়াজুল মাসুদের। জিপিএ ৪.২৫। হতাশা কাটাতে সে সময় ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। ডেটা এন্ট্রির কাজ। তখন প্রতি ঘণ্টায় এক ডলার পারিশ্রমিক পেতেন। এখন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। ফ্রিল্যান্সিং করে তাঁর মাসিক আয় গড়ে সাত লাখ টাকা। বগুড়া শহরে বড় অফিস নিয়েছেন। তাঁর ওয়েব হোস্টিং কোম্পানিতে এখন কাজ করেন প্রায় ২৫ জন তরুণ। অধিকাংশই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রিয়াজুলের প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তাঁরাও মাসে ১০-৩০ হাজার টাকা আয় করছেন। কর্মীদের বেতন, অফিসের খরচ মিটিয়ে প্রতি মাসে রিয়াজুলের হাতে প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা থাকে।

বগুড়া শহরের ঝোপগাড়ি এলাকায় তাঁর বাড়ি। বাবা বেলাল উদ্দিন সেখানে অ্যানটিক গয়নার ব্যবসা করতেন। তবে ছেলের আয়ে সংসারে সচ্ছলতা আসায় ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

রিয়াজুলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর নিজের অফিসে বসে। বলছিলেন, ‘রাত জেগে কাজ করতে করতে এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। চিকিৎসকেরা সন্দেহ করেছিলেন, ক্যানসার। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। এর মধ্যে কাজ বন্ধ ছিল অনেক দিন। তখন মাসে আয় ১ লাখ টাকা থেকে ৩০ হাজারে নেমে এসেছিল।’

তখনই কাজের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৮ সালে ৪-৫ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ড প্রেস ডটকমে বেশ ভালো বেতনে চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের অফিস সামলে সময় দিতে পারছিলেন না বলে ছয় মাস পর চাকরি ছেড়ে দেন। রিয়াজুল বলেন, ‘এখন ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ ২০টি দেশে আইটি সার্ভিস দিচ্ছি। “টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার” ক্যাটাগরির মর্যাদা পাচ্ছি।’ করোনাকালেও রিয়াজুলদের আয় কমেনি, বরং বেড়েছে।

ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা বলছিলেন এই তরুণ, ‘নিজের মালিকানায় বেসরকারি আইটি পার্ক গড়তে চাই। যেখানে হাজারো শিক্ষিত তরুণের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে চাই।’