হতে পারেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট

প্রতিনিয়তই বাড়ছে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের চাহিদা। আর এই কথা মাথায় রেখে আপনিও এই পেশায় গড়তে পারেন নিজের ক্যারিয়ার। কৃতজ্ঞতা: ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক ছবি: মনিরুল আলম
প্রতিনিয়তই বাড়ছে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের চাহিদা। আর এই কথা মাথায় রেখে আপনিও এই পেশায় গড়তে পারেন নিজের ক্যারিয়ার। কৃতজ্ঞতা: ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক ছবি: মনিরুল আলম

বর্তমানে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ২৯টি আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৯। রাজধানীসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা শহরে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি রয়েছে। আরও রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। আবার নতুন নতুন চিকিৎসাসেবার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এখানে রোগীর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ছে। পাশাপাশি চিকিৎসকদের নানাভাবে সহযোগিতা করার জন্য কিছু সহকারীর প্রয়োজন হচ্ছে। এরাই বর্তমানে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নামে পরিচিত। প্রতিনিয়তই বাড়ছে এসব টেকনোলজিস্টের চাহিদা। আর এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে আপনিও এই পেশায় গড়তে পারেন নিজের ক্যারিয়ার।
এ পেশায় আসতে হলে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করতে হবে। এখন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত ২৩৮টি মেডিকেল টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে ভর্তি হতে পারেন। ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজির ওপর এসব কোর্স করতে চার বছরে ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রতিষ্ঠানভেদে এসব কোর্স করতে খরচটাও আলাদা হয়ে থাকে। আর ডিপ্লোমা কোর্সটি করার পর মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা, যেমন বিএসসি ইন মেডিকেল টেকনোলজি করে ভালো করা যায়। এ ক্ষেত্রেও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পড়ার সুযোগ আছে।
মেডিকেল টেকনোলজির শিক্ষা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েকটি বিষয়ে ডিপ্লোমা করা যায়। ল্যাবরেটরি মেডিসিন বা প্যাথলজি, ডেন্টাল, ফার্মেসি, ফিজিওথেরাপি, নার্সিং, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, প্যারামেডিকেল ইত্যাদি। আর এর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে যেকোনো বিভাগ থেকে জিপিএ ২.৫ সহ এসএসসি– পাস। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মেডিকেল উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (বিমস) চেয়ারম্যান এম এ বাসেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে যে পরিমাণে হাসপাতাল বা ক্লিনিক বাড়ছে, সে তুলনায় দক্ষ টেকনোলজিস্ট কম। মেডিকেল টেকনোলজির যেকোনো একটি বিষয়ে চার বছরের ডিপ্লোমা করার পর কাউকে বেকার থাকতে হয় না। পড়ার সময়ই কাজের দক্ষতা বাড়াতে দেশের বড় বড় হাসপাতাল বা ক্লিনিকে এক বছরের ইন্টার্নশিপ করানো হয়। একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি কর্মদক্ষতা যত ভালো হবে, তত ভালো অবস্থানে বা ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া সহজ হবে, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিনিয়র টেকনোলজিস্ট (ল্যাব.) মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘আমাদের দেশে মেডিকেল সেক্টর দিন দিন উন্নত হচ্ছে। আর মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের চাহিদাও বাড়ছে। এ ছাড়া বিদেশেও আমাদের মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।’
২০০৯ সালে বিমস থেকে ডিপ্লোমা ইন ল্যাবরেটরি মেডিসিনে পাস করেন শিরিন আক্তার। তিনি এখন ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, একজন ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টকে রোগীর ডায়াবেটিস, রক্ত, প্রস্রাব, মল ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করার কাজগুলো করতে হয়। রেডিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্টদের অবশ্যই তাঁর কাজে পরিপূর্ণ দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ, এখানে কোনো রকমের ভুল হলে একজন রোগীর পুরো চিকিৎসাতেই ভুল থেকে যাবে। চিকিৎসকেরা তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই রোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া চিকিৎসকের নানা কাজেও এঁদের সহযোগিতা করতে হয়। ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মাদ শাহজাহান সুমন বলেন, সাধারণত হাসপাতালগুলোতে পরামর্শক চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলেন টেকনোলজিস্টরা। তাঁদের হাসপাতালের ল্যাবে ৫২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কাজ করছেন।
একজন টেকনোলজিস্ট যেকোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কাজ করে শুরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। পরে কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বেতনও বাড়তে থাকে। মো. ইউসুফ মিয়া আরও বলেন, দেশের চাহিদা ছাড়িয়ে বিদেশেও এখন অনেক টেকনোলজিস্ট কাজ করে ভালো উপার্জন করছেন। সবচেয়ে বেশি চাহিদা আছে সৌদি আরব ও কানাডায়। বর্তমানে এনজিওগুলোতেও এঁদের নেওয়া হচ্ছে।