হবু মায়ের সাধে...

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

বাড়িতে আসবে নতুন অতিথি। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা তার জন্য। সন্তানধারণের মোটামুটি সাত মাসের মাথায় হবু মায়ের জন্য বিশেষ উৎসব আয়োজনের রীতি আছে। এ দেশে এর নাম ‘সাধ’। পশ্চিমা ধারায় ‘বেবি শাওয়ার’ হিসেবে আয়োজন করা হয়।

সিগমা আইনুলের সাধ অনুষ্ঠান পারিবারিকভাবে আয়োজন করা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
সিগমা আইনুলের সাধ অনুষ্ঠান পারিবারিকভাবে আয়োজন করা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

সংগীতশিল্পী ঐশিকা নদী জানালেন, দেশজ রীতিতে সাধের অনুষ্ঠানে তিনি লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরেছিলেন। তাঁর মায়ের বাড়িতে তত্ত্ব নিয়ে এসেছিলেন স্বামী শুভ ইসলামের বাড়ির সদস্যরা। তত্ত্বে ছিল হবু মায়ের শাড়ি-চুড়ি, হবু বাবার পাঞ্জাবি।
সাত রকম মিষ্টি, সাত রকম পিঠা আর সাত পদের ঝাল খাবার রাখা ছিল হবু মায়ের জন্য। অবশ্য হবু বাবাও ভাগ পেয়েছিলেন।
সায়মা আহমেদ রেমি, পেশায় চিকিৎসক। তিনি জানালেন, তাঁর মায়ের বাড়ির ছাদে ‘সাধ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তাঁর জন্য করা সেই অনুষ্ঠানে ছিল কেক, কুকিজ, মিষ্টি, পাস্তা ইত্যাদি খাবারের ব্যবস্থা। পরিচিত ক্যাটারিং সার্ভিসের মাধ্যমে অতিথিদের জন্য বিরিয়ানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পমপম, বেলুনসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে বাড়ির ভেতরটা সাজিয়েছিলেন নিজেরাই। ছবি তোলার জন্য আলাদা একটা জায়গা রাখা ছিল সেখানে। একটা স্ট্যান্ডে ছোট্ট শিশুর একটি পোশাক রাখা ছিল। সাদা রঙের পোশাকটিতে শুভার্থীরা লিখেছিলেন নানান কথা, শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন অন্য এক আঙ্গিকে।
সিগমা আইনুল কাজ করেন পপুলেশন কাউন্সিলের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে। কিছুদিন আগেই তাঁর জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিল প্যাস্টেল রঙে রাঙানো কাগজ কেটে বানানো চাঁদ-তারার সমারোহ। বসার ঘরের এক কোনায় ছিল খাবারের ব্যবস্থা। বাড়ির অন্য আরেকটি কোনায় ছিল নীল-গোলাপি রঙের বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সাজানো। তিনি জানালেন, বাড়ির লোকেরাই একেবারে ঘরোয়া পরিবেশে তাঁর জন্য এ আয়োজন করেছিলেন। রঙিন কাগজ কিনে এনে কেটে নিয়ে গ্লিটার লাগিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কাগজের পাশাপাশি ছিল পমপম আর বেলুনও।
আল্পনা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানালেন, ঢাকা এবং এর বাইরেও এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা করে থাকেন তাঁরা। গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী বাসার ভেতর, ছাদ কিংবা রেস্তোরাঁয় আয়োজন করা হয়। নিজস্ব চিত্রগ্রাহক রয়েছে তাঁদের, খাবারের ব্যবস্থাও করে থাকেন তাঁরা। তবে কেউ কেউ এ দুটির ব্যবস্থা আলাদাভাবেও করিয়ে নেন।

.
.

অনুষ্ঠানের জায়গায় সেলফি বুথ রাখেন তাঁরা, প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি দেখানোর ব্যবস্থাও করেন। তবে সবই মূলত গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী। হবু মা হয়তো গাড়ি থেকে নামছেন, সেই সময়টায় হবু বাবা তাঁকে সাহায্য করছেন, এমন ছবি থাকতে পারে নানান ছবির মাঝে। ছোট্ট শিশুর পোশাক নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনাও থাকে কারও কারও। তবে ঢাকার বাইরে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চাইলে এক-দেড় মাস আগেই জানিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে জানালেন তাঁরা।
বিদেশ-বিভুঁইয়েও বাঙালি হবু মায়ের ‘সাধ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। তবে তা একটু ভিন্নভাবে। চিকিৎ​সক নওসাবাহ্‌ নূর যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন। সেখানেই হয়েছে তাঁর জন্য ‘সাধ’ আয়োজন। তিনি জানালেন, সেখানে বাঙালি হবু মায়ের জন্য সারপ্রাইজ থাকে এ আয়োজনটি। কোনো এক বন্ধুর বাড়িতে আয়োজন করে স্বাভাবিক একটি দাওয়াতের কথা বলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। এ কাজে হবু বাবার সাহায্য নিয়ে থাকেন বন্ধুরা। বন্ধুরা একই রঙের পোশাক পরেন, আর হবু মাকে পরানো হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের পোশাক। সাধারণত কয়েক রকম ভর্তাসহ বাঙালি খাবারদাবারের আয়োজন থাকে। মায়ের জন্য থালি সাজানোও হয়। কখনো কখনো এক বন্ধুর বাড়িতে অন্যরা সবাই একেক রকম খাবার নিয়ে হাজির হন।
নওসাবাহ্‌ নূরের নিজের অভিজ্ঞতা একেবারেই অন্য রকম। তাঁর সন্তানের জন্ম হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের আগেই। তাই বন্ধুরা আয়োজনের সময়টাই পাননি। তাতে দমে যাননি তাঁর বন্ধুরা। ছোট্ট শিশুর জন্মের পর নতুন মায়ের জন্য সাধ আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। নওসাবাহ্‌ নূরের ভীষণ পছন্দ প্রজাপতি। তাই তাঁর বন্ধুর বাড়িতে সাজানো বেলুনগুলোতে ছিল প্রজাপতি, কেকের ওপরেও ছিল প্রজাপতির নকশা। সন্তান জন্মের পর আকস্মিক এমন আয়োজন পেয়ে আনন্দটাও বেশি ছিল তাঁর।