হবু শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সঙ্গে প্রথম দেখায় যা করবেন, যা করবেন না

বড়দিন উপলক্ষে লন্ডনে শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

প্রেম করার আগে সাধারণত কেউ পরিবার নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। তাই প্রেমের সময়টুকু অনেকেই কপালে চিন্তার ভাঁজ ছাড়াই কাটিয়ে দেন। কিন্তু প্রেমপর্বের শেষে জীবনে আসে পরিণয়ের বিশেষ মুহূর্ত। না চাইলেও তখন ফ্রেমে চলে আসে দুই পরিবারের আরও অনেক চরিত্র। প্রেমের বিয়ে, তাই দুই পরিবারে জানাতে পাত্র-পাত্রীকে নিতে হয় বাড়তি সাবধানতা।

যাচ্ছেন হবু শ্বশুরবাড়িতে প্রথমবার দেখা করতে। তখন মনে হাজারো চিন্তা আর ভয় থাকা স্বাভাবিক। কারণ, সঙ্গীর সঙ্গে আপনার রসায়ন ঠিক থাকলেও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তা ধরে রাখাটাই বড় পরীক্ষা।

একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন আফিয়া। পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেছেন পছন্দের পাত্রকেই। আফিয়া প্রথমবার হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁদের সব কথা না জানিয়েই। অফিসের একটি কাজের অজুহাত নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন। প্রথমে না জানলেও পরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ঠিক আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি হতে যাচ্ছেন এই বাড়ির বউ। প্রথম দেখাতে পোশাক, কথা বলা আর ব্যবহারে স্বাভাবিকতা ধরে রেখেছিলেন আফিয়া।

শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে প্রথম দেখায় কী করবেন আর কী করবেন না, তার ছক আগে থেকে ঠিক করে নিতে হবে। প্রথম দেখা বাড়িতে বা রেস্তোরাঁ যেখানেই হোক না কেন, কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি।

ওয়েডিং ডেকর বাই নুসরাতের প্রধান নির্বাহী নুসরাত নওরিন অনেক বছর ধরেই কাজ করছেন ‘ওয়েডিং প্ল্যানার’ হিসেবে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘প্রথমে দর্শনদারি, পরে গুণবিচারি। তাই প্রথম দর্শনে ব্যবহার, বিনয়, পোশাক—সবকিছুই হতে হবে যথাযথ। নতুন পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময়ে যোগাযোগে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। ব্যবহারে কৃত্রিমতা একেবারেই রাখা যাবে না।’

প্রথম দেখায় থাকুন আন্তরিক। মডেল: নাহিদ ও মিথিলা
ছবি: প্রথম আলো

প্রথমবারেই দেখা করা

পরিচয়পর্বের জন্য প্রথম যে তারিখ ঠিক হবে, সেটা কোনোভাবেই আপনার পক্ষ থেকে পরিবর্তন করা যাবে না। আপনি যতই ব্যস্ত থাকেন না কেন, সময় ও তারিখ ঠিক রাখা জরুরি। এটা পরিচয়পর্বের অন্যতম বিনয়। কারণ, এর মাধ্যমে আপনি নতুন পরিবারকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটা বোঝা যায়।

স্বাভাবিক থাকুন

প্রথম দেখায় একটু ভয় থাকতে পারে। তবে তা যেন অস্বাভাবিক না হয়। কথা বলার সময় ঘাবড়ে গেলে তা আপনার বিপরীতে চলে যাবে, বরং পরিবারের সদস্যদের সমন্ধে আগেভাগে সঙ্গীর কাছ থেকে ধারণা নিয়ে রাখুন। এতে কথা বলার সময় আপনি সেগুলো রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে সদস্যদের মধ্যে আপনার সমন্ধে একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। আবার পরিবারের সদস্যরা দ্রুত আপনাকে আপন করে নেবেন।

থাকুন হাস্যোজ্জ্বল

প্রথমবার দেখা হলেও থাকতে হবে হাসিখুশি। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিন আগ্রহভরে। যেন মনে না হয় আপনি কথা বলতে চাইছেন না বা আগ্রহী না। বরং হাসিমুখে উত্তর দিতে পারেন। হয়তো এমন একটি কথা বলল যেটা আপনার পছন্দ না–ও হতে পারে। সেটা আপনি সহজ স্বাভাবিকভাবে গুছিয়ে বোঝাতে পারেন। কিন্তু চট করে রাগ প্রকাশ না করাই ভালো।

আপ্যায়নে এগিয়ে আসা

বাড়িতে হোক বা রেস্তোরাঁয় প্রথম দেখার সময় খাবারের আয়োজন থাকবে নিশ্চয়ই। খাবার টেবিলে এলেই সেটা আগে নিজের প্লেটে নেওয়া যাবে না। অন্যদের প্রথমে নেওয়ার অনুরোধ করতে হবে। খাবার ফরমাশের আগে নিতে হবে তাঁদের পরামর্শ। আপনার পছন্দ জিজ্ঞেস করলে তবেই বলুন। ছেলে বা মেয়ে সবার জন্যই এই পর্ব পার করা জরুরি। যদি পরিচয়পর্ব বাসায় হয়, তাহলে নিজে কোনো একটি পদ রান্না করতে পারেন। সাধারণত ছেলেরা বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চান। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, আপনার হবু বউয়ের মা–বাবার সামনে আপনি যদি একটি ডিশ তৈরি করে এনে রাখেন, সেটা আপনার পয়েন্ট বাড়িয়ে দেবে।

ফোন রাখুন নীরব

কথা বলার সময় ফোন ব্যবহার অভদ্রতা। খুব জরুরি ফোন হলে তাঁদের অনুমতি নিয়ে তবেই দূরে গিয়ে কথা বলুন। ফোন এই সময়ে সাইলেন্ট রাখা ভালো। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যখন কথা বলছেন, খেয়াল রাখুন বারবার ফোন দিচ্ছেন কি না। সচেতনভাবে বিষয়টি এড়িয়ে চলুন।

সঠিকভাবে বিদায় নিন

পরিচয়পর্বের শেষে এসে যেন তরি ডুবে না যায়। এত সময় দেখা করে, কথা বলার পর বিদায়ের পর্বটিও যেন ঠিকমতো হয়, খেয়াল রাখুন। চলে আসার আগে সবার সঙ্গে দেখা করে ও বলে আসা ভদ্রতা। পাশাপাশি দেখা করার জন্য ধন্যবাদ তো অবশ্যই দিতে হবে। বিদায়পর্বে সবাই কীভাবে বাড়ি পৌঁছাবে, সেটাও জেনে নিতে পারেন। সঙ্গে গাড়ি থাকলে তাঁদের নামিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করতে পারেন, তবে সেটাও মার্জিতভাবে। যেন গাড়ি আছে বলে অহমিকা প্রকাশ না পায়।