হলফনামা করতে হলে...

বিভিন্ন কাজে হলফনামা সম্পাদনের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে জমি কেনাবেচা, বিবাহ কিংবা বিচ্ছেদ, নাম পরিবর্তন বা সংশোধনসহ বিভিন্ন কাজে এর প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন দলিল তৈরির কাজেও লাগে হলফনামা। নিয়মকানুন মেনেই তা সম্পাদন করতে হয়। আসুন, জেনে নিই হলফনামা করতে কী কী মানতে হবে।

 ১

হলফনামাতে হলফকারীর পূর্ণ নাম, ঠিকানা, বাবা-মায়ের নাম, জাতীয়তা, বয়স, পেশা ও ধর্ম উল্লেখ করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। হলফকারী ব্যক্তি কী বিষয়ে, কী কারণে ও কেন হলফ করছেন, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে হবে।

 ২

কোনো জমিজমা নিয়ে হলে জমির তফসিল উল্লেখ করতে হবে।

 ৩

বিয়েসংক্রান্ত হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নাম, বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানা, বয়স ও পেশা উল্লেখ করতে হবে। বিয়ের তারিখ, কত টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়েছে এবং দেনমোহরের কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, সেটাও উল্লেখ থাকতে হবে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কী কারণে তালাক দেওয়া হয়েছে, এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকতে হবে। তবে বিয়ের হলফনামায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের স্বাক্ষর লাগবে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে যিনি বিবাহবিচ্ছেদের হলফনামা করছেন, শুধু তিনি স্বাক্ষর দেবেন।

 ৪

যেকোনো হলফনামায় অবশ্যই যে তারিখে হলফনামাটি সম্পাদন করা হচ্ছে, সেই তারিখটি লিখতে হবে।  

 ৫

নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পূর্ব নাম কী ছিল এবং বর্তমান নামে কী সংশোধন হয়েছে, তা স্পষ্ট করে লিখতে হবে।

 ৬

হলফকারীকে হলফনামার সঙ্গে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে এবং স্বাক্ষর করতে হবে।

 ৭

হলফনামার শেষ অংশে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে শনাক্ত করাতে হবে এবং আইনজীবীকে উল্লেখ করতে হবে এই হলফনামা তাঁর সামনে সম্পন্ন করা হয়েছে।

 ৮

হলফনামা সম্পাদন করতে হয় ২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। তবে বিবাহবিচ্ছেদের হলফনামা করতে হবে ৫০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। হলফনামা লেখার পর (কম্পোজ বা টাইপ) নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সত্যায়ন করাতে হবে। নিয়ম হচ্ছে যিনি হলফনামাটি করলেন, তিনি নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁর হলফনামাটি সম্পর্কে সত্যপাঠ করবেন। তখন নোটারি পাবলিক বা ম্যাজিস্ট্রেট হলফনামাটি যাচাই-বাছাই করে এর ওপর স্বাক্ষর দেবেন এবং একটি বিশেষ সরকারি সিল ব্যবহার করে এতে ক্রমিক নম্বর বসাবেন। হলফনামাটির একটি ফটোকপি তিনি রেখে দেবেন। নোটারি পাবলিক থেকে নোটারি করার সময় নোটারি পাবলিকের সনদ নম্বর জেনে নেওয়া উচিত। নোটারি পাবলিক ভুয়া কি না, তা যাচাই করে নিতে হবে। কোনো পেছনের তারিখ দিয়ে হলফনামা সম্পাদন করা উচিত নয়।

 ৯

জমি কেনাবেচার দলিলের সঙ্গে দলিল নিবন্ধনের সময় হলফনামা দিতে হয় সাবরেজিস্ট্রি অফিসে।

 লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট