
সময়ের পরিবর্তন মানে ফ্যাশনে নতুন যোগ। ফ্যাশনের একটা ধারা ভেঙে তৈরি হচ্ছে আরেকটি। পোশাকের সঙ্গে মানানসই জুতা, ব্যাগ বা গয়না—এসব অনুষঙ্গ ছাড়া কি ফ্যাশন হয়! তরুণীদের কাছে এখন প্রয়োজনীয় সঙ্গী—হাল ফ্যাশনের হিল জুতা। কিন্তু সঠিক জুতা নির্বাচনে ভুল হলে তা বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে। তাই একটু সচেতন হয়েই শারীরিক অবস্থা অনুসারে জুতা পরা উচিত।
হাইহিল জনপ্রিয় হলেও দীর্ঘদিন ধরে এর ব্যবহার বিভিন্ন রকমের অসুখের সৃষ্টি করতে পারে। উঁচু হিলের বেশি ব্যবহার আর্থ্রাইটির (হাড়ের সংযোগে ব্যথা), অ্যাঙ্কেল পেইন (গোড়ালির ব্যথা), ডিজলোকেশন (হাড় নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে যাওয়া), পায়ের আঙুলে ব্যথাসহ অনেক সমস্যা হতে পারে। যাঁদের পায়ে ভেরিকোস ভেইন (পায়ের রগ ফুলে যাওয়া) সমস্যা আছে তাঁদের হিল পরা উচিত নয়।
হাইহিল মানেই হলো জুতার এক পাশ উঁচু আর আরেক পাশ নিচু। তবে কিছু জুতার সামনে পেছনে সমান উচ্চতা থাকে। এমন জুতা ব্যবহার করলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ঝুঁকি নেই কোনো। সামনে-পেছনে সমান নয় এমন হিল জুতা ফ্যাশনেবল হলেও জরুরি সময়ে এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ হিল পরে তাড়াতাড়ি হাঁটতে, সিঁড়ি বা চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে স্বল্প সময়ের জন্য হাইহিল ক্ষতিকর নয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘হাইহিলের জুতা বেশি ব্যবহার করলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। স্থূলকায়, বয়ষ্ক, জন্মগত পায়ের সমস্যা, বাত, কোমরে ব্যথা, অন্তঃসত্ত্বা ও সন্তান প্রসবের পর নারীদের হিল জুতা পরিহার করা উচিত। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের হাইহিল অনাগত শিশুর শারীরিক ক্ষতি করতে পারে। তা ছাড়া ছোট বাচ্চাদের হিল জুতা না পরানোই ভালো, কারণ বাচ্চাদের পায়ের হাড় নরম থাকে। হিল পরার কারণে অনেক সময় তাদের যথাযথ বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত হয় ও পায়ের হাড় আঁকাবাঁকা হয়ে যেতে পারে।’
আনুষ্ঠানিক পোশাকের সঙ্গে অনেক অফিসে হিল জুতা পরতে হয়, তাদের অফিস ছাড়া বাকি সময় অবশ্যই ফ্ল্যাট জুতা পরতে হবে। কাজ থেকে বাসায় ফিরে পায়ে গরম পানি লাগিয়ে ম্যাসাজ করা ও পায়ের হালকা ব্যায়াম করার কথা বলেছেন এ বি এম আবদুল্লাহ।
যেহেতু হাইহিল কম ব্যবহারে কোনো ক্ষতি নেই, তাই ফ্যাশনের সঙ্গে মানানসই এমন জুতা ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজার ঘুরে দেখা গেল এখন পেনসিল হিল, কিটেন হিল (এক থেকে দুই ইঞ্চি উঁচু), ওয়েজ হিল (সামনে-পেছনে হিল সমান), স্টিলেটো হিল, প্লাম্পার্স শু (হাঁটু পর্যন্ত আটকানো হিল), অ্যাঙ্কেল স্ট্র্যাপ শু (সামনে ফিতা দেওয়া হিল)—এসবই চলছে এখন।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্র্যান্ড নির্বাহী রিজাতুল করিম বলেন, ‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীরা ফ্ল্যাট, টিনএজাররা ওয়েজ ও কিটেন হিল এবং পার্টির জন্য স্টিলেটো বেশি পছন্দ করছে।’
বাটার দোকানে গিয়ে দেখা গেল পেনসিল হিলের পরিবর্তে ফ্ল্যাট, কিটেন হিল ও ওয়েজ হিল রাখা হচ্ছে বেশি।
হিল জুতা বর্তমানে ফ্যাশনের অংশ হলেও জুতা নির্বাচনের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে দৈহিক গঠন, বয়স ও ওজনের ওপর। আর দীর্ঘ সময় হিল ব্যবহার করতে হলে পেনসিল হিলের পরিবর্তে ওয়েজ হিলই ভালো।