হাতে খড়ি

.
.

নাবা যখন পুতুলের মতো ছিল, দুই হাতে তাকে অবলীলায় আগলে রাখা যেত। তখন থেকেই ভাবনা শুরু, মেয়েটা কবে বড় হবে? কবেই বা স্কুলে যাবে? দিন যেন তখন কাটতেই চায় না। অনেক অপেক্ষার পর এখন নাবার বয়স সাড়ে তিন। সে নিজের কথা বলতে পারে। দুরন্তপনার সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্যও উদ্গ্রীব।
অবশেষে সেদিন তার প্রতীক্ষার অবসান হলো। ভোরে নাবাকে বিছানা থেকে টেনে তুলে সুসংবাদটা দিলাম। ‘তুমি স্কুলে যাবে—ওঠো, ওঠো।’ সে তো মহাখুশি। সাতসকালে ওর ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নেই বললেই চলে। সেদিন স্কুলে যাওয়ার আনন্দে একদম তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে নিল। বেরিয়ে পড়ল বাবার হাত ধরে। স্কুলব্যাগটা একটু ভারীই হয়ে গেল বৈকি! তা অবশ্য দেখার বিষয় নয়।
বাবার সঙ্গে বেরিয়ে গেল বাসার পাশেরই এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভেবেছিলাম কি-না-কি ঘটায় স্কুলে গিয়ে। আমার সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বাবা-মেয়ে স্কুল থেকে ফিরল ঘণ্টা খানেক পর। ঘরে ঢুকেই জুতো জোড়া খুলে ব্যাগ ছুড়ে মারল।
প্রথম স্কুলে যাওয়ার গল্পটা ওর মুখ থেকে শুনব বলে আমি ভীষণ উদ্গ্রীব। কিন্তু ওর অবস্থা দেখে মনে হলো, সে আর কখনোই স্কুলে যাবে না। মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে ইনিয়েবিনিয়ে, চকলেটের লোভ দেখিয়ে ওর স্কুলে প্রথম দিনের গল্প শুনতে বসে গেলাম। নাবাকে বললাম, ‘তোমার বান্ধবী হয়নি?’ ও বলল, ‘হয়েছে তো।’ বললাম, ‘তোমার বান্ধবীদের নাম কী?’

 কানা (কণা), আলুচি আর কান্দা (কান্তা)—নাবা বলতে থাকল নাম। আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছিল, অনেক কষ্টে আটকে রাখলাম।

‘ম্যাডাম নাকি স্যার এসেছিল?’ ‘মেয়ে’ ছোট জবাব। মানে ম্যাডাম এসেছিল।

‘দেখতে কেমন?’

আমার পরা কলারওয়ালা জামা দেখিয়ে বলল, ‘এ রকম জামা পরা আর সুন্দর।’

‘তোমাকে কী বলল?’ ‘ম্যাডাম বলেছে, স্কুল কেমন লেগেছে?’

কী বলেছ?

‘বলেছি, ভালো লেগেছে।’

ভাবলাম, এইটুকুন মেয়ে আবার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে ঠিকমতো। আবার জিজ্ঞেস করি, ‘আর স্কুলে যাবে না?’ উত্তর শুনে তো আমি অবাক, বলল, ‘না।’ আরও বলল, ‘আমি ডান হাত দিয়ে বাঁ কান ধরতে পারিনি তো, তাই স্কুলে যাওয়া লাগবে না।’ তখন বুঝলাম, এই তাহলে কথা...

ওলিজাতুল মাওলা

ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা