হায় ইডিপাস...

ইডিপাস ও ট্র্যাজেডি যেন সমার্থক শব্দ। ১৮ জুন থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিস রচিত ট্র্যাজিক নাটক ইডিপাস দেখে চট্টগ্রামের দর্শকেরা আরও একবার বিষাদে আক্রান্ত হলেন। তির্যক নাট্যদল তাদের এই নাটকটি প্রায় এক দশক পর নবরূপে মঞ্চায়ন করল।
আহমেদ ইকবাল হায়দার নির্দেশিত নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। এবারের প্রযোজনায় নতুন অনেক কিছু সংযোজিত হয়েছে। নির্দেশনা, অভিনয়. মঞ্চসজ্জা, পোশাক পরিকল্পনা সব দিক দিয়ে মনে রাখার মতো একটি নাটক উপহার পেল চট্টগ্রামের দর্শকেরা।
সন্তান হবে পিতৃঘাতী ও মাতৃ-বিবাহিত। দেবতাদের এমন অমোঘবাণী শুনে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ছেলে ইডিপাসকে হত্যা করতে জল্লাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন থিবসের রাজা লাউস। দয়া হয়েছিল জল্লাদের। শিশুটিকে না মেরে সে নির্জন পাহাড়ে এক মেষপালকের কাছে রেখে এসেছিলেন তিনি। মেষপালক শিশুটিকে তুলে দেন কোরিন্থ রাজ্যের রাজা পলিউবাসের কাছে। নিঃসন্তান রাজা পলিউবাস ও রানি মেরোপির সন্তান হিসেবে বড় হতে থাকা ইডিপাস একদিন এই দৈববাণীর কথা জানতে পারেন।
নিয়তি থেকে পালাতে কোরিন্থ ছেড়ে চলে আসেন থিবসে। পথে ভ্রমণে বের হওয়া থিবসের রাজা লাউসের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। এ সময় রাজার সৈন্যদলের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত বিবাদে জড়িয়ে পড়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধে হত্যা করেন নিজের পিতাকে। পরে সে রাজ্যের রানি অর্থাৎ নিজের মা জোকস্তাকে বিয়ে করেন ইডিপাস। দীর্ঘদিন রাজ্য শাসন করার পর থিবসে দেখা দেয় খরা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দৈব বাণী আসে—এই রাজ্যে কোনো এক পাপের কারেণে এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। অন্ধ সাধকপুরুষ তাইরেসিয়াস অবশেষে ইডিপাসকে তাঁর পাপের কথা জানিয়ে দেন। রানি জোকস্তা বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। আর ইডিপাস নিজেকে অন্ধ করে পথের ভিখিরি হয়ে বেরিয়ে পড়েন। সফোক্লিসের ট্রিলজির প্রথম পর্বের এই আখ্যান সাফল্যের সঙ্গেই মঞ্চস্থ করলেন তির্যকেরা কুশিলবেরা। নিয়তি, লোভ, ক্ষমতার দম্ভ এসব দুর্বলতা কী করে একসময় ব্যক্তির পতনের পথ তৈরি করে এই নাটক, সেটাই রূপায়িত করল। এ কারণে ইডিপাস আজও সমকালীন।
গ্রিক রীতি অনুসরণ করে নাটকের কুশিলবেরা চরিত্র অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট মুখোশ পরেছেন। তাই আবেগের তারতম্য তৈরিতে সংলাপ প্রক্ষেপণে ও অভিনয়ে বৈচিত্র্য আনতে হয়েছে কুশিলবদের। নাটকে ইডিপাস চরিত্রে আহমেদ ইকবাল হায়দার বহু দিন মনে রাখার মতো অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া দর্শক মনে দাগ কেটেছে জোকস্তা চরিত্রে শায়লা শারমিন ও তাইরেসিয়াস চরিত্রে সুজিত চক্রবর্তীর অভিনয়। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রমিজ আহমেদ, মাহবুবুল ইসলাম, সুমেন দে, শ্যামল বড়ুয়া, শুভ রক্ষিত, রিপন বড়ুয়া, লাবণী বিশ্বাস, অমিত চক্রবর্তী, নাঈম হাসান, আবদুল্লাহ আল মামুন, মুহাম্মদ নুরুন্নবী ও প্রিয়তোষ দাশ।
তির্যকের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অ্যামেইজিং বাংলাদেশ ও জনতা ব্যাংকের সহযোগিতায় এ নাটক আয়োজন করা হয়েছিল। নাটকের উদ্বোধন করেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন।