হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে কী খাবেন, কী খাবেন না

.
.

দেশে হৃদ্রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হৃদ্রোগজনিত অকালমৃত্যুর হারও বাড়ছে। এই রোগের চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। এ কারণে অর্থনীতিতে চাপ পড়ছে। অথচ স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ও জীবনযাপনে শৃঙ্খলা আনলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়ানো যায়। হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে হলে সক্রিয় জীবনযাপন অর্থাৎ ব্যায়াম, হাঁটাচলার অভ্যাস ধরে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি খাবারও খেতে হবে বেছে বেছে।
হৃদ্রোগের প্রধান কারণ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকা। পরিকল্পিত খাদ্যগ্রহণ নীতি মেনে চললে কোলেস্টেরল আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে যে খাবার প্রতিদিনের তালিকায় রাখতে হবে অথবা বাদ দিতে হবে, তা জেনে নিন।
উপকারী খাবার
আঁশযুক্ত খাদ্য: সবুজ শাকসবজি, সালাদ, ছোলা, বুট, টক ফল, পেয়ারা, আমলকী, কামরাঙা, আমড়া, লেবু ও বরই খোসাসহ খাবেন।
দ্রবণীয় আঁশ: মটরশুঁটি, শিমের বিচি, বিনস ওটমিল (জই), ফল, শাকসবজি খাবেন।
উপকারী চর্বি: উপকারী চর্বি বা অসম্পৃক্ত চর্বি (ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো। সব রকমের মাছ, সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিজ্জ তেল-কর্ন ওয়েল, সান ফ্লাওয়ার ওয়েল, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল (ক্যালরি অনুযায়ী) খাবেন।
যে খাবার পরিমিত পরিমাণে খাবেন
শর্করা জাতীয় খাবার। দুধ বা দুধের তৈরি খাবার, চিনি-মিষ্টি জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খাবেন। এ ছাড়া লবণ কম খাবেন। দৈনিক লবণ ২৩ শ মিলিগ্রামের কম খেতে পারেন। কারও যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে তাকে দিনে ১৫ শ মিলিগ্রাম বা এর চেয়ে কম লবণ গ্রহণ করা উচিত।
যে খাবার বাদ দিতে হবে
লাল মাংস, চিংড়ি, ঘি: খাসির মাংস, মাংসের চর্বি, গরুর মাংস, মগজ, কলিজা, গলদা চিংড়ি, মাছের ডিম, হাঁস ও মুরগির চামড়া, হাড়ের মজ্জা, ঘি, মাখন, ডালডা, নারকেল, মার্জারিন খাবে না।
খারাপ চর্বি: খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি মোট ক্যালরির ৭ শতাংশের চেয়েও কম থাকা উচিত। দিনে ১৫-২০ গ্রামেরও কম সম্পৃক্ত চর্বি গ্রহণ করা উচিত। সম্পৃক্ত চর্বি (ট্রান্সফ্যাট) থাকা উচিত ১ শতাংশেরও কম। সম্পৃক্ত চর্বি একেবারে না খেলে আরও ভালো। এ ছাড়া চর্বিযুক্ত মাংস, চর্বিবহুল দুগ্ধজাত খাদ্য (ঘি, মাখন, দুধ), পাম তেল, নারকেল তেল বাদ দেওয়া উচিত।
ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড ও ক্র্যাকারস, ডোনাট কেক, পেস্ট্রিতেও সম্পৃক্ত চর্বি এবং উচ্চ ক্যালরি থাকে। এসব খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, খাদ্যে যত কম কোলেস্টেরল থাকে তত ভালো। দিনে ৩০০ মিলিগ্রামের চেয়ে কম কোলেস্টেরল যেন থাকে।
রান্নার প্রণালি: খাবার প্রস্তুতপ্রণালির সঙ্গে ক্যালরি গ্রহণের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, যা ওজন কমাতে বা বাড়াতে সাহায্য করে। বিষয়টির সঙ্গে হৃদ্রোগের সম্পর্ক নিবিড়। খাবার ডুবো তেলে ভাজা যাবে না। ভাজার চেয়ে গ্রিল করা খাবার ভালো। সেদ্ধ বা কম তেলে রান্না খাবার আরও ভালো।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অনিবার্য। প্রতিদিন নিয়মমাফিক সুষম খাবার গ্রহণ করুন। হৃদ্রোগের ঝুঁকি থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই পুষ্টিসচেতন হতে হবে।
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল