ত্রিশের আগের ভুলগুলো

বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলে অনেকেই হা-পিত্যেশ করেন, ইশ আরেকটু আগে যদি এটা করতাম! ৩০ বছর বয়স হয়ে গেলে নিজেকে গুছিয়ে-গুটিয়ে নিতে শুরু করেন অনেকে। বিশের পর থেকে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় এক দশক পরে গিয়ে তা অনেকটাই স্থায়ী হয়। এ সময়ের মধ্যে বেশ কিছু ভুল হয়ে যায় জীবনে।
৩০ বছর বয়সীদের অনেকেই হয়তো ঘর-সংসার পেতে বসেছেন কিংবা কাজে-কর্মে নিজেকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন। যাঁরা ইতিমধ্যে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের এই দশকটি পার করেছেন, তাঁদের চোখে ওই সময়টিতে ভুল হয় এমন কয়েকটি বিষয় নিশ্চয়ই ধরা পড়েছে। ওই সময় জীবনে সবচেয়ে বড় ভুলগুলো কী হয় এবং তা থেকে কী শিক্ষা নিতে হয়, তা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করেছেন প্রশ্নোত্তর-বিষয়ক ওয়েবসাইট কোরাতে।
এ বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্যবসা ও প্রযুক্তি-বিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার। তাই জেনে নেওয়া যাক সেই ভুলগুলো কী কী।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা না করা
বয়স যখন ২০ পেরিয়ে যায় অনেকেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা হারিয়ে বসেন। নিজের পছন্দমতো না হলেও একটা চাকরি জুটিয়ে থিতু হতে চান অনেকেই। জীবনের সবকিছু জেনে-বুঝে ওঠার আগেই এ চাকরিই তাঁর ক্যারিয়ার হয়ে যায়। মাস শেষে বেতন আসবে, এ ধারণা তাদের পেয়ে বসে। ক্যারিয়ারে সন্তুষ্টির চেয়ে তাঁরা চাকরির নিরাপত্তাকেই সবকিছু ভেবে বসেন। তাই পরে যখন ব্যবসা বা অন্য কোনো প্রকল্পে কাজ করতে ইচ্ছা জাগে তখন দায়িত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে তা করা করা হয়ে ওঠে না।
পরিবার-পরিজনকে পর করা

৩০ বছরের কম বয়সীরা মারাত্মক ভুল করে বসে পরিবারকে গুরুত্ব না দিয়ে। এ প্রসঙ্গে ৩০ বছর পেরোনো সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের পণ্য নকশাকারী মাইকেল ডোরিয়ার ব্যাচ বলেন, ‘শুধু কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন না। কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে সুখস্মৃতি তৈরি করুন। বয়স যত বাড়বে ততই অর্থপূর্ণ কোনো সম্পর্ক তৈরিতে বাধা আসবে, কঠিন মনে হবে। সময় থাকতে তাই সম্পর্ক তৈরির সুযোগ কাজে লাগান।’
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবহেলা
৩০ বছরের কম বয়সীরা স্বাস্থ্যের প্রতি কম নজর দেন। এ সময় ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনেকেই স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেন না। মাইকেল ডোরিয়ার ব্যাচ বলেন, ‘সুস্থ থাকুন। সুস্থ থাকাটাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। ৩০ বছর বয়সে পৌঁছাতে না-পৌঁছাতে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়া এবং সব সময় ক্লান্তি অনুভব করলে ভুল হবে। নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস করুন এবং তরুণ বয়সেই নিজেকে চটপটে-চনমনে করে রাখুন।’

মা-বাবা হওয়ার সুযোগ না নেওয়া
নিজের ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটে অনেকেই বিয়ে করতে বা সন্তান নিতে চান না। এ প্রসঙ্গে সিইও-বিষয়ক প্রশিক্ষণদাতা অ্যালিসন হুইটমেয়ার তাঁর অভিজ্ঞতায় লিখেছেন, ‘ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে আমি ৩০ বছরের আগে সন্তান নিতে চাইনি। পরে সন্তান নিতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে এবং বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিতেও যেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অনেক প্রচেষ্টার পর ৪৩ বছর বয়সে গিয়ে মা হতে পেরেছি।’ অ্যালিসনের পরামর্শ হচ্ছে, যাঁরা সন্তান নিতে চান তাঁরা যেন এমন ভুল না করেন। ত্রিশের আগেই যেন একটি সন্তান নিয়ে নেন।
বৃদ্ধ মা-বাবাকে সময় না দেওয়া
৪৬ বছর বয়সী উদ্যোক্তা ও ব্লগার জেমস আলটুচের ৩০ বছর বয়সের আগে করা একটি মারাত্মক ভুলের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তাঁর মতে, অনেকেই এই বয়সে বৃদ্ধ মা-বাবাকে সময় দেন না। জেমস দুঃখ করে লিখেছেন, ‘আমার বয়স যখন ৩৪ তখন একদিন বাবার সঙ্গে ফোনে কথা-কাটাকাটি করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত কোনো কথা বলিনি। এর মধ্যে বাবা হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একটা মেইল লিখেছিলেন। আমি সেই মেইলের জবাবও দিইনি। বাবা আমি দুঃখিত, তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।’
ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় না করা
৩০ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে আরেকটি মারাত্মক ভুল চোখে পড়ে আর তা হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় না করার প্রবণতা। কম বয়স থেকে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে না উঠলে যখন দায়িত্ব বেশি বেড়ে যাবে তখন সঞ্চয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ সময় যে সঞ্চয় করে রাখা হবে তা পরে কাজে লাগানো যাবে। তাই ভুল না করে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করা উচিত বলেই পরামর্শ দেন উদ্যোক্তা জেমস।
জীবনের মজা নিতে ভুলে যান
২০ বছর পেরিয়ে গেছেন মানে এই নয় যে আপনি জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবেন না। মাইক্রোসফটের কর্মকর্তা মাইকেল ডোরিয়ার ব্যাচ বলেন, ‘আমি ৩০ বছরের আগের বয়সটার অর্ধেকটাই টাকার পেছনে ছুটে কাটিয়েছি। টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে আমি নিজে কখনো খুশি হতে পারিনি আর জীবন সম্পর্কে বাজে ধারণা হয়েছে। টাকার পেছনে না ছুটে প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটান। আপনার সন্তানদের কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন কিংবা কোনো কনসার্টে যান। শুধু মনে রাখবেন, আপনি যে টাকার পেছনে ছুটছেন তা আপনি দুঃখে-কষ্টে থাকলে তার কোনো দামই নেই।’