৮ রকম ভয়

ভয়ে যেন শরীর ঠান্ডা হয়ে এল, গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল, থরথর করে কাঁপতে শুরু করল সে। প্রতীকী ছবি
ভয়ে যেন শরীর ঠান্ডা হয়ে এল, গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল, থরথর করে কাঁপতে শুরু করল সে। প্রতীকী ছবি

ভয়ে যেন শরীর ঠান্ডা হয়ে এল, গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল তাঁর, থরথর করে কাঁপতে শুরু করল লোকটাই। কিংবা ঘরে ঢুকেই চিৎকার দিয়ে মূর্ছা গেলেন এক গৃহিণী। এমন ঘটনার মুখোমুখি আমরা কখনো কখনো হই বৈকি। আমাদের মনে নানা ধরনের ‘ফোবিয়া’ বা ভীতি থেকেই এমনটা হয়ে থাকে। নানা বয়সের বিপুলসংখ্যক মানুষ এমন নানা রকম ভীতিতে আক্রান্ত। সবচেয়ে সাধারণ আট ভীতির কথা এখানে তুলে ধরা হলো।


মাকড়সা ভীতি

অনেক মানুষেরই মাকড়সা ভীতি ( arachnophobia) আছে। আশপাশে কোথাও মাকড়সা আছে বা থাকতে পারে এমন মনে হলেই যেকোনো স্থানে যেকোনো সময়ে তারা ভয় পান। এমনকি শুধু মাকড়সার জাল বা মাকড়সার ছবি দেখেও তারা ভীত হয়ে উঠতে পারেন। মাকড়সা ভীতি থেকে বয়স ভেদে কেউ কেউ কেঁদে ফেলতে বা চিৎকার করে উঠতে পারেন। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়তে বা অতিরিক্ত ঘামতে থাকতে পারেন। সাধারণত ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে মাকড়সা ভীতি বেশি দেখা যায়।

সাপ ভীতি

সাপের ভীতি ( Ophidiophobia ) থেকে সাধারণত একেক জন একেক রকম আচরণ করেন। কারণ একেক জনের ক্ষেত্রে সাপের ভয়ের চিন্তা, সাপের চিত্রকল্প, সাপের চলাফেরা বা নড়াচড়ার শব্দ আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি থেকে এমনটা হতে পারে। সাপের ভীতি থেকে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হতে পারে। সাপের ভয় মনের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকলে প্রায় অসম্ভব সব জায়গাতেও কেউ কেউ সাপের উপস্থিতি কল্পনা করে ভয় পেতে পারেন। সাপের ভয় থেকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, অতিরিক্ত উদ্বেগে আক্রান্ত হওয়া এমনকি দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

উচ্চতা ভীতি

অনেক বেশি উঁচু জায়গায় উঠে গেলে আমরা অনেকেই ভয় পাই। বিশেষত সেখান থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে বা সেখানে নিরাপত্তা কম থাকলে এটা প্রায় সবারই হয়। তবে, কারও কারও ক্ষেত্রে এটা প্রবল। একে উচ্চতা ভীতি (Acrophobia) বলে। প্রবল উচ্চতা ভীতি আছে এমন কেউ কোনো কারণে অতিরিক্ত উচ্চতায় উঠে গেলে তাদের প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নিতে না পারলে অতিরিক্ত অস্থিরতায় তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। উচ্চতা ভীতিও সাধারণত ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

কুকুর ভীতি

কুকুর ভয় পান এমন কেউ প্রয়োজনে ঘরে বাসে থাকবেন কিন্তু কুকুরের সামনে পড়তে চাইবেন না। বিশেষত সঙ্গে কেউ না থাকলে এই ভয় তাদের মধ্যে বেশি মাত্রায় কাজ করে। কুকুর ভীতি (Cynophobia) অবশ্য একেক জনের একেক রকম হতে পারে। কেউ কেউ কুকুরের ডাক শুনেই ভয়ে কেঁপে উঠতে পারেন। কেউ কেউ কুকুর দেখলে অনিরাপদ বোধ করেন এবং সঙ্গে কেউ থাকলে তার সাহায্য চান। আবার কেউ কেউ বিশেষ জাতের কুকুর দেখে ভয় পেলেও রাস্তাঘাটের সব কুকুরকে ভয় পান না। কুকুর ভীতি থেকে ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, লুকানোর চেষ্টা করা, কেঁদে ফেলা কিংবা দৌড়ে পালানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

বিদ্যুৎ চমক ও বজ্রপাতের ভীতি

ঝড়-বাদলের সময় বিদ্যুতের চমকে ভয়ে কেঁপে ওঠেন অনেকেই। কেউ কেউ বজ্রপাতের আশঙ্কায় শঙ্কিত থাকেন। বিদ্যুৎ চমক ও বজ্রপাতের ভীতি (Astraphobia) থেকে ভয়ে কেঁদে ওঠা, অতিরিক্ত ঘামতে শুরু করা, বমি বমি ভাব হওয়া এবং প্রস্রাব পেতে পারে। বিশেষত একা থাকলে এমন ভীতি বেশি পেয়ে বসতে পারে। এ সময় তারা নিরাপদ আশ্রয়ে থাকলেও অতিরিক্ত নিরাপত্তার খোঁজ করেন। কেউ কেউ ঘরের ভেতরে থাকলেও বিছানা বা টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে পারেন, নিজেকে আশ্বস্ত করতে তারা কানে তুলা গুজতে পারেন।

ইনজেকশন ভীতি

ইনজেকশন নেওয়ার সময় একটু ব্যথা তো সবারই লাগে। কিন্তু যাদের ইনজেকশন ভীতি (Trypanophobia) আছে তারা এমনকি এই ভয়ে চিকিৎসা করানো থেকেও বিরত থাকার চেষ্টা করেন। শরীরে এমন সুচ ফোটার ভীতি থেকে হঠাৎ করে রক্তচাপ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, ভয়ে শরীরে কাঁপুনি শুরু হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকে কোনোভাবেই যাতে ইনজেকশন না নিতে হয় এর জন্য প্রবল চেষ্টা করতে পারেন।

উড়াল ভীতি

উড়তে ভয় পান অনেকেই। একে উড়াল ভীতি (Pteromerhanophobia) বলা হয়। বিমান, বেলুন বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই এই উড়াল ভীতি তৈরি হয়। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া কিংবা সহায়সম্বলহীন হয়ে দুর্গম কোনো স্থানে আটকে পড়ার ভীতি থেকে তারা বিমানে ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে চান। উড়াল ভীতি থেকে ঠান্ডা ঘাম হতে পারে, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

ধুলোময়লা ও জীবাণু ভীতি

ধুলোময়লা থেকে শরীরে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকেন কেউ কেউ। এই ধুলোময়লা ও জীবাণু ভীতি (Mysophobia) থেকে সারাক্ষণই স্বাস্থ্যনাশের আশঙ্কায় ভুগতে পারেন অনেকে। এ থেকে অনেকের রীতিমতো শারীরিক অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যান। কোনো জায়গায় গিয়ে এই ভীতি জেগে উঠলে প্যানিক অ্যাটাক, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঝিমঝিম করা, ঘাম হওয়া কিংবা রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যায়ও পড়তে পারেন কেউ কেউ।

(হেলথ মি আপ অবলম্বনে)