
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ হচ্ছে কিশোর বয়সের। এদের প্রায় ২৫ শতাংশ বিভিন্ন মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে। এই অপুষ্টি দূরীকরণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নানা কথা বলেছেন বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান আখতারুন নাহার
প্রথম আলো: বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের একটি বড় অংশ অপুষ্টির শিকার। এর পেছনে কী কী কারণ রয়েছে?
আখতারুন নাহার: অপুষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, পুষ্টি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অসচেতনতা। অধিক জনসংখ্যা যে দেশে, সেখানে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ, অল্প জায়গার মধ্যে অনেক লোকের বসবাসের ফলে নোংরা পানি, আবর্জনায় ভরপুর পথঘাট স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাড়িতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে না। ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া অধিক জনসংখ্যার কারণে খাদ্যদ্রব্যের সহজলভ্যতাও কমে যায়। ফলে এতে কিশোর-কিশোরীরা স্বাভাবিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। আর্থিক কারণে প্রয়োজনীয় খাবার খেতে পারে না। ফলে অপুষ্টির শিকার হয়। আবার যে পরিবারে অর্থের সমস্যা নেই সেই পরিবারের ছেলেমেয়েরাও অপুষ্টির শিকার হতে পারে। এর কারণ, অতিরিক্ত পরিমাণে জাঙ্কফুড খাওয়ার প্রবণতা। আবার সচেতন নন বলে ছেলেমেয়েরা যখন যা আবদার করছে তখন তাকে তা-ই কিনে খেতে দেওয়া হচ্ছে। হয়তো তা প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি। এটাও অপুষ্টির কারণ। পুষ্টি সম্পর্কে অজ্ঞতা যেমন: বয়স অনুপাতে কতটুকু খাবার—কী খাবার—কতক্ষণ পর পর খেতে হবে, তা অনেক মা-বাবাই বুঝতে পারেন না। এখানে সুষম খাবারের ঘাটতি দেখা যায়। অপুষ্টি দূর করতে হলে সুষম খাবার খেতে হবে। এটা শুধু কিশোর-কিশোরী নয়, সব বয়সের মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
প্রথম আলো: অপুষ্টির কারণে কিশোর-কিশোরীরা কী কী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে?
আখতারুন নাহার: অপুষ্টির কারণে কিশোর-কিশোরীরা শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। রক্তস্বল্পতা, মুখের কোনায় ঘা, পেটের অসুখ, রক্ত আমাশয়, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, চোখের অসুস্থতা, চুল পড়া, পেটে কৃমি, দুর্বলতা, শারীরিক গঠন সুষ্ঠু না হওয়া ইত্যাদি শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এ ছাড়া অপুষ্টির কারণে কিশোর-কিশোরীর বিকাশ সঠিকভাবে হয় না। তার স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ পরিপূর্ণভাবে ঘটে না। বুদ্ধিগত বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। তার মেধার বিকাশ কম হয়। ফলে বড় হলে সেই কিশোর বা কিশোরী মেধাবী হবে না। আর জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়বে।
প্রথম আলো: অনেকে মনে করেন বেশি পরিমাণে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেলেই অপুষ্টি দূর হবে। এটা কি ঠিক?
আখতারুন নাহার: অনেকের ধারণা, বেশি বেশি দুধ ও মাংস খেলে বুঝি স্বাস্থ্য ভালো হয়। আসলে তা নয়। প্রতিটি মানুষেরই মিশ্র খাবার অর্থাৎ সুষম খাবার অর্থাৎ খাদ্যের সব কয়টি উপাদানের উপস্থিতি খাবারে থাকতে হবে। সে জন্য মাংস ও দুধের পাশাপাশি মাছ, ডিম, ডাল, ভাত, রুটি, সবজি, ফলমূল সবই থাকতে হবে। এ ছাড়া কোনো একটি খাবার বেশি বেশি খাওয়া ভালো নয়।
প্রথম আলো: স্লিম হওয়ার জন্য অনেক কিশোরী প্রায়ই না খেয়ে থাকে। তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আখতারুন নাহার: কোনো জীবিত প্রাণীই না খেয়ে থাকতে পারে না। না খেয়ে ওজন কমাতে গেলে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেবে। যেমন: চোখ নষ্ট হওয়া, ত্বক বিবর্ণ হওয়া, লাবণ্য নষ্ট হওয়া, চুল পড়া, ক্লান্তি-অবসাদ,মাথা ঘোরা ইত্যাদি। সুতরাং না খেয়ে ওজন কমানো নয়, সারা দিনে অল্প অল্প করে খেয়ে ওজন কমাতে হবে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মোছাব্বের হোসেন