'আমার পক্ষে ওই মেয়েকে ভালো লাগার কথা বলা সম্ভব নয়'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

সমস্যা
আমার বয়স ২৫ বছর। বছর দেড়েক আগে এক মেয়েকে ভালো লেগেছে। তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি কখনো, তবে দেখা হয় মাঝেমধ্যে। প্রায় এক বছর পর খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম, মেয়েটি আমার বাসার পাশেই থাকে। তার বাবা বেশ অবস্থাসম্পন্ন, নিজেদের বাড়ি আছে। আমি অল্প বেতনের একটা চাকরি করি, সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছি। তাই আমার পক্ষে ওই মেয়েকে ভালো লাগার কথা বলা সম্ভব নয়। আমি তাকে ভুলে যেতে চাই। কিন্তু সেটাও পারছি না। সারাক্ষণ শুধু ওই মেয়ের ভাবনাতেই আচ্ছন্ন থাকি। পড়াশোনা, চাকরি—কোনো কিছুতেই মন বসছে না ইদানীং। সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছি মনের অজান্তে। মাঝেমধ্যে মনে হয় অসৎ পথে রোজগার করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাই! তারপর সেই মেয়েকে মনের কথাটি বলব। কিন্তু মনুষ্যত্বের কারণে সেটাও সম্ভব নয়। আমি এখন কী করব?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ
তুমি এখনো পড়াশোনা করছ এবং সেই সঙ্গে উপার্জনও করছ। শুধু এ কারণেই কিন্তু তুমি নিজেকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করতে পারো। সমাজের অন্য স্তরে বসবাস করা একটি মেয়েকে তোমার ভালো লাগতেই পারে এবং তাতে কোনো অন্যায় নেই। মেয়েটির সঙ্গে কোথায় তোমার দেখা হচ্ছে জানি না। তোমার পক্ষে কি সম্ভব নয় তার সঙ্গে পরিচিত হওয়া? সেও তোমার মতো এই সমাজেরই একটি মানুষ, কাজেই প্রথমে ভদ্রভাবে নিজের পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে তুমি আলাপ করতেই পারো, তাই না? যে মানুষটিকে তুমি একেবারেই চেনো না, তাকে দূর থেকে দেখে ভালো লাগতে পারে, কিন্তু ফ্যান্টাসির জগতে বাস করে এভাবে স্বপ্নের জাল বুনতে থাকলে তোমার শুধু শুধুই অনেক সময় কষ্ট হবে। সেও একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং তুমি তার সঙ্গে পরিচিত হলে সে যদি আগ্রহী হয়, তাহলে তার পছন্দ-অপছন্দ ও জীবনদর্শন সম্পর্কে জানার সুযোগ হবে। তবে অবশ্যই এর আগে নিজের মনের সঙ্গে একটু বোঝাপড়া করে নিলে ভালো হয়। কারণ, মেয়েটি হয়তো তোমার সঙ্গে বেশি কথা বলতে আগ্রহী না–ও হতে পারে। এতে করে তুমি প্রথমে যে ধাক্কাটুকু খাবে, সেটি সামলানোর মতো শক্তি সঞ্চয় করে তারপর উদ্যোগ নিতে পারো। তবে তার সঙ্গে সৌজন্য রক্ষা করে কথা বললে মেয়েটিও ভদ্রভাবেই তোমার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ব্যাপারে খুব অনীহা প্রকাশ করার কথা নয়। একবার কথা বলার পর হয়তো তাকে বাস্তব জগতের আর একটি সাধারণ মানুষ হিসেবে গ্রহণ করা তোমার জন্য সহজ হতে পারে। তুমি রাতারাতি বড়লোক হলেই যে মেয়েটির কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়? তার ওপর অনৈতিকভাবে টাকা উপার্জন করলে তুমি কি নিজের প্রতি শ্রদ্ধা ধরে রাখতে পারবে? তোমার মধ্যে যে মানবতাবোধ ও সততা রয়েছে, সেটি তোমাকে সমাজের উঁচুতলার অনেক মানুষের চেয়ে আরও বেশি মর্যাদাসম্পন্ন করে তুলতে পারে, যদি তুমি নিজেকে জ্ঞান ও শ্রদ্ধার আলোকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হও। কাজেই নিজেকে শুধু সামাজিক স্তর বা উপার্জন দিয়ে বিচার না করে বরং তোমার পক্ষে এ পর্যন্ত যা-ই অর্জন সম্ভব হয়েছে, তার জন্য সব সময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। হয়তো–বা তাতে মনটা একটু শান্ত হবে।