'ওরে বাবা রে, এত মাইয়া কোন বাড়ির!'

আমার দাদার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শায়। কিন্তু বাবার চাকরির সূত্রে পরিবারের সবাইকে অনেকটা সময় সৌদি আরবে থাকতে হয়েছে। ২০০১ সালে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে চলে আসি। ঢাকায় স্থায়ী হই। চট্টগ্রামে খুব একটা যাওয়া হতো না। বিয়ে কিংবা অন্য বড় উৎসবে অবশ্য মাঝেমধ্যে যাওয়া হতো। ঈদ খুব বেশি করা হয়নি। বেশির ভাগ ঈদ সৌদি আরবে কিংবা ঢাকায় করতে হতো।
গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে প্রতিবছরই সৌদি আরব থেকে আমরা বাংলাদেশে আসতাম। সেই ছুটিতে একবার আমরা রোজার ঈদ পেয়েছিলাম। তখন আমার বয়স পাঁচ বছর। ঈদের আগের দিন আমরা সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শাতে চলে যাই। মদুনাঘাট থেকে নৌকায় চড়ে পরিবারের সবাই মিলে গ্রামের পথ ধরি। নৌকা থেকে নেমে আবার এক কিলোমিটার হাঁটাপথ। গ্রামের বাড়ি পৌঁছানোর পর মনের মধ্যে অন্য রকম এক আনন্দ খেলা করছিল। বাড়িতে তখন বিদ্যুৎ ছিল না। হারিকেন আর কুপি বাতি ছিল। সেই কুপি বাতির আলোয় ভাইবোনেরা সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করতাম।
বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে চলে আসার বছর দুয়েক পর প্রথম চট্টগ্রামে ঈদ উদ্যাপন করতে যাই। তখন আমাদের চট্টগ্রামের বাসা ছিল সুগন্ধা আবাসিক এলাকায়। ঈদ উপলক্ষে ভাইবোনেরা সবাই একসঙ্গে হই। চট্টগ্রাম শহরে কয়েক দিন থেকে সবাই গ্রামে চলে গেলাম। তত দিনে গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। ২০০৩ সালের সেই ঈদের একটা ঘটনা আমার এখনো পরিষ্কার মনে আছে। গ্রামের বাড়ির রাস্তায় আমরা সব ভাইবোনেরা দল বেঁধে হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে পাশের গ্রাম ফতেহাবাদ চলে যাই। সেখানকার একজন মহিলা কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ বললেন, ‘ওরে বাবা রে, এত মাইয়া কোন বাড়ির! এট্টা মাইয়া বিয়া দিতে তো মা-বাপ ফতুর অই যাইব।’ এটা মনে হলেই আমার এখনো হাসি পায়।