'চিরকুমার সমিতি' হতাশ!

২০১১ সালে বিয়ে করায় চিরকুমার ​সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক তপন সেনগুপ্তর (মাঝে) হাতে অব্যাহতিপত্র তুলে দেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক (বাঁয়ে) ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
২০১১ সালে বিয়ে করায় চিরকুমার ​সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক তপন সেনগুপ্তর (মাঝে) হাতে অব্যাহতিপত্র তুলে দেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক (বাঁয়ে) ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র হতাশায় ভুগছে কুমিল্লার ‘চিরকুমার সমিতি’। তাদের প্রধান উপদেষ্টা রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বিয়ে করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। ৬৮ বছর বয়সী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা নিশ্চিত করেছেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের ৫ ও ৬ তারিখে জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে বিয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। তার আগে যেকোনো দিন মন্ত্রী ছেঁটে ফেলবেন তাঁর ‘ব্যাচেলর’ ডিগ্রিটা!
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘কনফার্মড ব্যাচেলর’ হিসেবেই পরিচিত কুমিল্লার বাসিন্দা মুজিবুল। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর হবু স্ত্রীর পরিচয় জানার জন্য কৌতূহল বেড়েছে। কিন্তু কনের পরিচয় জানাতে চাননি মন্ত্রী। রসবোধের জন্য নাম আছে তাঁর। কনের নাম না জানানোর একটা কারণও দেখিয়েছেন ২ সেপ্টেম্বর, গণমাধ্যমের সামনে, ‘যদি ফিইর্যাি যায়!’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখলা গ্রামে। এসএসসি পাস করেছেন ২০০০ সালে। এলএলবি পাস করার পর এখন চাকরি করছেন একটি নাম না–জানা সংস্থায়। বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগেই নাকি ওই চাকরি ছেড়ে দেবেন। তিন বছর ধরে তাঁর সঙ্গে চেনা–পরিচয় রেলপথমন্ত্রীর।
মুজিবুল হক কুমিল্লায় কোনো জনসভায় দলের কাউকে যেতে অনুরোধ করলে নেতা–মন্ত্রীরা শর্ত চাপিয়ে দিতেন। শর্ত একটাই, বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে তাঁকে। বেকায়দায় পড়ে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হলেও পরে বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিতেন কুমিল্লা–১১ আসনের এই সাংসদ।
‘চিরকুমার সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ২০০১ সালে কুমিল্লার অবিবাহিত পুরুষদের নিয়ে চিরকুমার সমিতির পথচলা শুরু। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রেলপথমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক তপন সেনগুপ্ত বিয়ে করেন। সংগঠনের নিয়মানুযায়ী, কোনো সদস্য বিয়ে করলে তাঁকে ‘অব্যাহতিপত্র’ তুলে দেওয়া হয়। সেদিন কুমিল্লা ক্লাবে আয়োজিত ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে তপন সেনগুপ্তকে অব্যাহতিপত্র তুলে দেন স্বয়ং রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। এবার সেই মন্ত্রীর বিয়ের খবরে স্বভাবতই সংগঠনের সদস্যরা হতাশ!
এত দিন দলীয় ‘চাপ’ সত্ত্বেও বিয়ে করেননি। তার পরও হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে প্রথমে ‘মর্মাহত’ হলেও কুমিল্লার ‘চিরকুমার সমিতি’ তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে শেষমেশ। সঙ্গে এ–ও জানিয়ে দিয়েছে, খুব শিগগির সমিতি থেকে ‘বহিষ্কার’ করা হবে তাঁকে। গত কয়েক বছরে কমিটির প্রচার সম্পাদক দিলীপ মজুমদার, সদস্য অচিন্ত্য দাস ও প্রহলাদ দেবনাথ বিয়ে করেছেন। তাই আজিজুর রহমানের কণ্ঠে হতাশা, ‘একে একে সব সদস্য বিয়ে করায় আমরা মর্মাহত।’ সমিতির সভাপতি প্রদীপ কুমার পালেরও একই অবস্থা, ‘আমাদের সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বিয়ে করছেন। এখন তিনি বিয়ে করলে তো আমাদের বলার কিছু নেই। তবে আমাদের মন খারাপ।’
সমিতির সদস্যদের বিয়ের দাওয়াত দিয়েছেন মন্ত্রী। সদস্যেরা নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাবেন। তবে বিবাহসভায় সমিতি–বিচ্ছেদের জন্য একটি ‘শোকগাথা’ পাঠের পরই নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাবেন তাঁরা। সমিতির এটাই নিয়ম!