'তাকে কেন এভাবে মেরে ফেলা হলো'

‘৯ মার্চ সকাল প্রায় আটটা। বাবা ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পাশের বাজারে নাশতা করতে যান। একটু পরেই কয়েকটি গুলির শব্দ শুনি। দৌড়ে গিয়ে দেখি, দোকানের সামনে বাবার লাশ পড়ে আছে। এরপর আর কিছু মনে নেই।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিলেন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়া ইউনিয়নের নতুনবাজার মগ্যা কার্বারিপাড়ার সুদৃষ্টি চাকমার (৩৭) ছেলে সূখার চাকমা। সূখা দশম শ্রেণীর ছাত্র। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সুদৃষ্টি চাকমার বন্ধু হূদি চাকমা (৩৩)।
সুদৃষ্টি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁকে হারিয়ে পরিবারটি এখন অন্ধকারে পড়েছে। সুদৃষ্টির মা-বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন।
ঘটনার দিন সরেজমিন দেখা যায়, সুদৃষ্টি চাকমার স্ত্রী একি চাকমা (২৯) কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে ছেলে সূখার চাকমা মেয়ে ওহেলি চাকমা (৯)। জ্ঞান ফিরতেই একি চাকমার প্রশ্ন ছিল, ‘আমার স্বামীর কী অপরাধ? তাকে কেন এভাবে মেরে ফেলা হলো। আমার ছেলেমেয়েকে এখন কে দেখবে? আমার তো সবই শেষ। এখন ছবি তুলে কী হবে?’
সুদৃষ্টির মামাতো ভাই নিউটন চাকমা বলেন, ‘দাদার কোনো শত্রু ছিল না। একসময় আঞ্চলিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ইদানীং কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সকালে তিনি ও হূদি চাকমা ঘুম থেকে উঠে নতুনবাজারে নাশতা করতে গেলে অস্ত্রধারী চার যুবক এসে কাছ থেকে গুলি করে দাদাকে হত্যা করেন। এ সময় হূদি চাকমা পালাতে চাইলে তাঁকেও গুলি করে আহত করা হয়।’
এদিকে ইউপিডিএফের দীঘিনালা উপজেলা সংগঠক কিশোর চাকমা সুদৃষ্টি ও হূদি চাকমাকে তাঁদের সদস্য বলে দাবি করে এ ঘটনার জন্য জেএসএসকে (সন্তু) দায়ি করেন। তিনি বলেন, ‘ইউপিডিএফের জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে জেএসএস (সন্তু) পক্ষ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা এর আগেও আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে হতাহত করেছে।’ তিনি অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। যোগাযোগ করা হলে জেএসএসের (সন্তু) কেন্দ্রীয় সহকারী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা ইউপিডিএফের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, জেএসএসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্যই ইউপিডিএফ এমন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে।
দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও বাবুছড়া এলাকায় আঞ্চলিক সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।